25 C
Khulna
Tuesday, July 8, 2025

মৃত্যুর ৩ দিন আগে খায়রুল বাসারকে কী বলেন মনু মিয়া

কিশোরগঞ্জের ইটনায় ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে পরিচিত মানবিক কবর খোঁড়ক মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করা এই মানুষটি শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর তিনি ব্যয় করেছেন নিঃস্বার্থ এই কাজে—কারও কাছ থেকে কোনো দিন কোনো পারিশ্রমিক চাননি।

মনু মিয়ার মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন অভিনেতা খায়রুল বাসার। কারণ, গত মাসে মনু মিয়া অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকাকালে বাসার তাঁর পাশে ছিলেন, হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। শনিবার নিজের ফেসবুকে মনু মিয়ার সঙ্গে তোলা দুটি ছবি শেয়ার করে খায়রুল বাসার লিখেছেন,

> “মনু কাকা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এতদিন উনি ঢাকায় ছিলেন। ৩ দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন। বলছিলেন, আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। উনার একটাই ইচ্ছা ছিল—সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা, আর আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া। সেটাই হয়েছে।”

তিনি আরও লেখেন,

> “উনার মহৎ কর্মের ফলস্বরূপ আল্লাহ নিশ্চয়ই তাঁকে তাঁর স্বপ্নের ঘোড়াটি উপহার দেবেন। সবাই মনু কাকার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।”

গেলো মাসে মনু মিয়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালে দুর্বৃত্তরা তাঁর প্রিয় ঘোড়াটি হত্যা করে। এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে মনু মিয়াকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। তাঁর মানবিক অবদানের কথা ছড়িয়ে পড়ে নেটদুনিয়ায়। এই সময়েই বিষয়টি নজরে আসে অভিনেতা খায়রুল বাসারের। তিনি মনু মিয়াকে একটি নতুন ঘোড়া উপহার দিতে চাইলেও, মনু মিয়া বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়ে দিয়ে কেবল তাঁর জন্য দোয়া চান।

মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করে খায়রুল বাসার বলেছিলেন,

> “আজ একজন সত্যিকারের নায়কের সঙ্গে দেখা হলো। মনু মিয়া অসহায় নন, বরং অসহায়ের আশ্রয়। আজন্ম একজন নায়ক তিনি। সমাজের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি কিছু চান না, শুধু আপনাদের জন্য দোয়া করেন।”

মানুষের মৃত্যু সংবাদ পেলেই তিনি খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম নিয়ে নিজের ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতেন কবরস্থানে। কোনো পারিশ্রমিক নয়, কেবল আন্তরিকতা ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি এই কাজ করতেন। দূরবর্তী কবরস্থানে পৌঁছাতে দ্রুতগতির একটি ঘোড়া কেনার জন্য নিজের ধানিজমিও বিক্রি করেছিলেন।

একজন নিঃস্বার্থ মানুষ, যিনি সারাজীবন ব্যয় করেছেন অন্যের অন্তিম যাত্রাকে সহজ ও সম্মানজনক করে তোলার পেছনে—মনু মিয়ার মতো মানুষের গল্প সমাজে খুব কমই দেখা যায়। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সেবার স্মৃতি থেকে যাবে অনেকের হৃদয়ে।

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ