26.6 C
Khulna
Monday, July 7, 2025

বউ পেটানোর শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ

বাংলাদেশে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ: জীবদ্দশায় ৭৬% নারী নির্যাতনের শিকার

ঘর, যেখানে এক নারীর জন্য নিরাপত্তা ও ভালোবাসার আশ্রয়স্থল হওয়ার কথা, সেই ঘরই প্রতিদিন অনেক নারীর জন্য হয়ে উঠছে এক নীরব কারাগার। বাংলাদেশে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে—এমনই এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ২০২৪ সালের এক জরিপে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের জীবদ্দশায় সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ হলেও বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। সম্প্রসারিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জীবদ্দশায় ৭৬ শতাংশ নারী এবং গত এক বছরে ৪৯ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

ঘরোয়া সহিংসতার হার বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বরিশালে এই হার সর্বোচ্চ—৮২ শতাংশ। খুলনায় ৮১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৬, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫, রংপুরে ৭৪ এবং এমনকি তুলনামূলকভাবে ‘কম সহিংসতা’ অঞ্চলের তালিকায় থাকা সিলেট ও ঢাকা বিভাগেও যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ নারী জীবনে কখনো না কখনো এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, দেশের কোনো বিভাগেই ঘরোয়া সহিংসতার হার ৭০ শতাংশের নিচে নেই।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে নারীর প্রতি সহিংসতার হার তুলনামূলকভাবে আরও বেশি। দুর্যোগের সময় নারীকে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়, অন্যদিকে সহ্য করতে হয় ঘরের ভেতরের অমানবিকতা, দারিদ্র্যের করাল গ্রাস, বাস্তুচ্যুতি ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার নিষ্ঠুরতা।

এই বাস্তবতা কেবল নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্নই তোলে না, বরং গোটা সমাজব্যবস্থার মানবিকতা ও নৈতিকতাকেও করে প্রশ্নবিদ্ধ। এমন এক সমাজে, যেখানে একজন নারী বাইরে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী বা জননী হিসেবে সম্মান পান, সেখানে ঘরে ফিরে তিনি হয়ে পড়েন সহিংসতার এক মূক শিকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট নিরসনে প্রয়োজন আইন প্রয়োগের কঠোরতা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, শিক্ষা ব্যবস্থায় লিঙ্গসমতা বিষয়ক শিক্ষা এবং নারীর আর্থিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন। শুধু রাষ্ট্র বা সমাজ নয়, প্রতিটি পরিবারের মধ্যে থেকে এই সহিংসতার শেকড় উপড়ে ফেলা ছাড়া সমাধান অসম্ভব।

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ