প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
রিয়াদে সৌদি আরব ও পাকিস্তান এক ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বুধবার। চুক্তির আওতায় বলা হয়েছে, কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার মতো একটি মাইলফলক।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সৌদি আরবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক রাজনীতির অস্থির ও সংবেদনশীল সময়েই এই চুক্তি সম্পন্ন হলো। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্যে যে পরিবর্তন এসেছে, সৌদি-পাকিস্তান চুক্তি সেই প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। গত সপ্তাহে কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
চুক্তির প্রভাব পাকিস্তানের জন্য যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি ভারতের কূটনীতিতেও এর প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের পর ইসলামাবাদ এই চুক্তিতে পৌঁছায়। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সাওয়াল জানান, জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সুস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নয়াদিল্লি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
ঐতিহাসিক তাৎপর্য
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো আসফানদিয়ার মির আল জাজিরাকে বলেন, “স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল, কিন্তু তা সত্তরের দশকে ভেঙে যায়। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থাকলেও এ ধরনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি তাই এক ঐতিহাসিক মোড়।”
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা গবেষক মুহাম্মদ ফয়সাল মনে করেন, এই চুক্তি ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার টেমপ্লেট হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, “চুক্তিটি যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং সৌদিতে পাকিস্তানি সেনা মোতায়েনের নতুন সম্ভাবনার পথ তৈরি করবে।”
নতুন জটিলতা
আসফানদিয়ার মির সতর্ক করে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সৌদির ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ভারতও ক্রমান্বয়ে রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে। গত এপ্রিলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি সফর করেছেন।
তিনি মন্তব্য করেন, “ভারত সবসময় চেয়েছে সৌদি আরবের মতো দেশগুলো পাকিস্তান থেকে দূরে থাকুক। কিন্তু এই চুক্তি প্রমাণ করল, রিয়াদ ইসলামাবাদের সম্পর্ককেও গুরুত্ব দেয়। এতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো।”