প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫
ঢাকা, ৮ অক্টোবর ২০২৫ — বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (ICT-1) বুধবার দুইটি “গুম ও নির্যাতন” মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে — এবং চার্জ গোনার (cognisance) সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এসব অভিযোগে প্রধান আসামি হিসেবে নাম রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার — এছাড়া তালিকায় আছেন তার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও কয়েক ডজন সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা।
মামলার সারমর্ম ও অভিযোগের বিশ্লেষণ
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, দুটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি হল র্যাব-এর টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (TFI) সেল, এবং অন্যটি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার (JIC) — যেখানে বিরোধী নেতা, মতপ্রকাশকারী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের গুম ও নিষ্পেষণ করা হয়েছে বলে বলা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গুম ও গোপন বন্দি থাকাকালীন খারাপ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে — যেমন হাত—পা বিচ্ছিন্নকরণ, নখ তুলে নেওয়া, বৈদ্যুতিক শকের প্রয়োগ, ঘোরানো চেয়ারে বেঁধে রাখা ইত্যাদি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বন্দিদের “কোড নাম” দিয়ে পরিচালিত হয়েছিল — যেমন বন্দিদের “Subject” (বিষয়) বলা হতো, আটককেন্দ্রকে “Art Gallery” বলা হতো, অন্যান্য গোপন কেন্দ্রে “Clinic” বা “Hospital” নামে অভিহিত হতো।
ICT-1 বিচারিক প্যানেল, তারফলবশত, অভিযোগ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আইনে নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী এই মামলার আসামিরা আর সরকারি পদে থাকতে পারবেন না এমন নির্দেশ দিয়েছে।
আদালত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।
—
রাজনৈতিক ও আইনি প্রেক্ষাপট
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গুম ও “নিঃশব্দ নিপীড়ন” বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, এবং অনেক ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ।
একটি গুম তদন্ত কমিশন ২০২৪ সালের দিকে গঠন করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল এসব ঘটনার তদন্ত করা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজীবী মহল ইতিমধ্যে এই মামলাগুলোর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই মামলাগুলোকে “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার” vs “নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতাপের লড়াই” হিসেবে দেখছেন।
—
সম্ভাব্য প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ
এই ধরণের মামলাগুলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, নিরাপত্তা বাহিনী ও তত্ত্বাবধায়ী নীতির স্বচ্ছতা ইত্যাদি প্রশ্নকে সামনে তুলে আনবে।
মামলার সাফল্য ও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, সাক্ষ্য–প্রমাণ গ্রহণযোগ্যতা, অপরাধীদের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় বিচারব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য পরীক্ষার পরিস্থিতি তৈরি করবে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নজর থাকবে — কারণ গুম, রাজনৈতিক নির্যাতন ও রাষ্ট্র কর্তৃক নির্মূল কাজগুলো সাধারণভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।