“বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না”—দুই শিশুর আর্তনাদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারেনি, তাদের বাবা আর ফিরবে না। ওরা বলে, ‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না।’ আমি কীভাবে ওদের বোঝাই যে ওদের বাবা আর জাগবে না। আবুল কালামই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। এখন আমি আর আমার সন্তানরা দিশেহারা।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে প্রাণ হারানো আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া। গতকাল সোমবার সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে স্বামীর দাফনের পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। প্রিয়জন হারানোর কান্না যেন থামছেই না তাঁর। স্বামীকে হারিয়ে দুই অবুঝ শিশুসন্তানকে নিয়ে মায়ের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

আর্থিক টানাপোড়েন আর হতাশা নিয়েই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন। অভাবের যন্ত্রণা কখনও পরিবার বা সন্তানদের বুঝতে দেননি কালাম– কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন কালামের স্ত্রী।
আইরিন আক্তার পিয়া জানান, শুধু স্ত্রী-সন্তান নয়, ভাইবোনদের সমস্যায়ও পাশে দাঁড়াতেন আবুল কালাম। বন্ধু-বান্ধব আর পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি ছিল সহানুভূতি। হাস্যোজ্জ্বল ও নির্মল এ মানুষটিকে হারানোর বেদনা সইতে পারছেন না কেউই।

নিহতের স্ত্রী বলেন, ওদের বাবার পূর্ণতা কে দেবে? বাবা তো আর আসবে না। আমার ছেলের বাবার বুক ছাড়া ঘুম আসে না। সারারাত বাবাকে খুঁজছে আর ছটফট করছে। ওরা তো অবুঝ, বলতে পারে না বাবা কী জিনিস!

তিনি আরও বলেন, সরকারকে বলেন আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে। সরকার কেন সচেতনভাবে কাজ করল না? তারা জানত, পথচারীরা নিচ দিয়ে হাঁটবে। তাহলে ওপরে কাজটা সচেতনভাবে করল না কেন? তারা সব কাজ অবহেলাভাবে করে। সরকার সচেতন থাকলে এত অল্প বয়সে আমার স্বামী মারা যেত না; আমার কলিজারা বাবাহারা হতো না।
প্রতিবেশী রোজা আক্তার বলেন, সরকারের গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। শুনেছি, সরকারের থেকে নাকি পাঁচ লাখ টাকা দেবে। পাঁচ লাখ কেন, কোটি টাকা দিলেও তাঁর জীবন ফিরে আসবে না। সারাজীবন তাদের কে দেখবে? আজ তাঁর মৃত্যু হলো সরকারের ভুলের কারণে। এই বিচার কে করবে? দেশে কখনও সঠিক বিচার পাওয়া যায় না।

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছি। আমরা সার্বক্ষণিক তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছি।
গতকাল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে উপজেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় এই তরুণ ব্যবসায়ীর। এর আগে সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। আবুল কালাম ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন। জীবিকার তাগিদে তিনি বিমানের টিকিট বিক্রির কাজ করতেন। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে থাকতেন সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়ার ভাড়া বাসায়।
ns/samakal

  • শেয়ার করুন