রাজশাহীতে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ, আক্রান্তদের অধিকাংশ সমকামী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

রাজশাহীতে বাড়ছে এইচআইভি (এইডস) সংক্রমণ। চলতি বছরের ১০ মাসে নতুন ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে এইডসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহীতে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।রামেকের এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬৪ নমুনা পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ হয়েছে ৯৩ জন। এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, ২ জন নারী ও ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের। একই সময়ে এইচআইভিতে মারা গেছেন আটজন। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন পরীক্ষা করাতে আসেন। যাদের পজিটিভ রিপোর্ট আসে তাদের কাউন্সেলিং করা হয়। বলা হয়, ‘এইচআইভি সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অর্থাৎ নিয়মিত চিকিৎসা এবং ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ২০১৯ সালে রামেক হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর ৭৭ জনের নমুনায় কারো দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। ২০২০ সালে দুই জন পজিটিভ হন। এরপর ২০২১ সালে ৮ জন, ২০২২ সালে ৮ জন, ২০২৩ সালে ২৪ জন, ২০২৪ সালে ২৭ জন ও ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালে আক্রান্ত ২৭ জনের ১৬ জনই সমকামীতার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এরমধ্যে যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ এবং রক্তের মাধ্যমে একজন সংক্রমিত হয়েছেন। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের ১৭ জন সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়া যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ ও রক্তের মাধ্যমে একজন সংক্রমিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এইচআইভি সংক্রমিত একজন বলেন, ‘রোগটি বহনের তথ্য জানার পর মনে হয়েছিল সব শেষ। রামেকে কাউন্সেলিংয়ের পর বুঝলাম, এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। নিয়মিত ওষুধে ভালো থাকা যায়। তবে রাজশাহীতে চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যাওয়া কষ্টকর। এখানে ওষুধ পেলে, স্বস্তি পেতাম।’মূলত রামেক হাসপাতালে শুধু এইচআইভি টেস্ট ও কাউন্সেলিং করা হয়। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই পর্যাপ্ত চিকিৎসার ও ওষুধের জন্য রাজশাহীর রোগীদের বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) যেতে হয়। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য রামেক হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সেলর রেজাউল করিম বলেন, নমুনা পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ শনাক্তের পর অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তাদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমরা একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। রুম রেনোভেশনের কাজ চলছে। শিগগিরই এটি চালু হলে এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর বগুড়ায় যেতে হবে না।

রাজশাহী এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, অরক্ষিত যৌন মিলন; নারী-পুরুষে অথবা পুরুষ-পুরুষে মিলন, এইচআইভি সংক্রমণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। এছাড়া গর্ভকালীন সময়, সন্তান জন্ম ও বুকের দুধ পানে মা থেকে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

  • শেয়ার করুন