প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫
*বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস: সচেতনতার নতুন অঙ্গীকার*
আজ ২৫ নভেম্বর, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ দিন বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে ডায়াবেটিস শুধু ব্যক্তিগত অসুস্থতা নয়—এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট। বাংলাদেশের মতো দ্রুত নগরায়ণশীল দেশে এই রোগের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। শহুরে জীবনের ব্যস্ততা, ফাস্টফুড নির্ভরতা, মানসিক চাপ এবং অনিয়মিত রুটিন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই দিবসের লক্ষ্য হলো—সচেতনতা বৃদ্ধি, ঝুঁকির কারণ শনাক্ত করা এবং জনগণকে প্রতিরোধমূলক জীবনযাত্রার দিকে নিয়ে আসা।
নীরব মহামারী : শহরে ডায়াবেটিসের বিস্তার
ডায়াবেটিস এখন দ্রুত ছড়ানো একটি নীরব মহামারি। অনেকেই শুরুতে লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না, ফলে রোগ জটিল হয়ে ওঠে। তরুণ, মধ্যবয়সী—প্রায় সব বয়সী মানুষই এখন আক্রান্ত হচ্ছে। আধুনিক জীবনযাত্রার চাপ ও অস্বাস্থ্যকর আচরণের কারণে শহুরে এলাকায় এ রোগ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে।
শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি: যান্ত্রিক জীবনের পরিণতি
শহুরে মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কম নড়াচড়া। অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, গাড়ি-লিফট ব্যবহার, হাঁটার সুযোগ কমে যাওয়া—এসবের ফলে ক্যালরি খরচ কমে যায়। ওজন বৃদ্ধি, ইনসুলিন প্রতিরোধ ও রক্তে গ্লুকোজ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
অস্বাস্থ্যকর খাবার: দ্রুত জীবনের দুঃসহ ফল
দ্রুত সময় বাঁচানোর প্রয়াসে আমরা বেশি নির্ভর হচ্ছি ফাস্টফুড, প্রসেসড খাবার ও চিনি-সমৃদ্ধ পানীয়ের উপর। এসব খাবারের অতিরিক্ত ক্যালরি, ট্রান্সফ্যাট ও চিনি শরীরের স্বাভাবিক গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করে। শিশু-কিশোরদের মধ্যেও এ ধরনের খাবার স্থূলতা ও ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
স্ট্রেস ও ঘুমের ঘাটতি: আধুনিক জীবনের লুকানো শত্রু
যানজট, কর্মস্থলের চাপ, আর্থিক দুঃশ্চিন্তা—এসব মিলিয়ে শহরের মানুষ প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। এতে কর্টিসল হরমোন বাড়ে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমায়। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর দ্রুত বিপর্যস্ত হয় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বাড়ে।
অতিরিক্ত ওজন: বড় ঝুঁকির চালক
ওজন বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া। বিশেষ করে পেটের চর্বি (visceral fat) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভারসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ এ রোগ মোকাবিলার অন্যতম চাবিকাঠি।
সচেতনতা ও জীবনযাত্রা পরিবর্তন: সহজ কিন্তু কার্যকর প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য রোগ—জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তনই বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। প্রতিদিন ৩০–৪০ মিনিট হাঁটা, সুষম ও পরিমিত খাবার খাওয়া, ফাস্টফুড ও চিনি কমানো, যথেষ্ট পানি পান করা এবং নিয়মিত ঘুম—এসব সহজ অভ্যাস ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়। পাশাপাশি নিয়মিত সুগার পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
সামষ্টিক দায়িত্ব: সুস্থ শহর, সুস্থ ভবিষ্যৎ
ডায়াবেটিস মোকাবিলায় শুধু ব্যক্তি নয়—পরিবার, কর্মস্থল ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবারের সহজলভ্যতা, হাঁটার পথ, শারীরিক পরিশ্রমের উৎসাহ এবং সচেতনতা প্রচার—এসব উদ্যোগ সুস্থ শহর গড়ে তুলতে পারে।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আমাদের প্রতিবার মনে করিয়ে দেয়—আজই সময় নিজের ও সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার।
—ডা. মো. মঞ্জুরুল হাওলাদার
মেডিকেল অফিসার
পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, খুলনা।