যশোর শহরে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের পঞ্চম তলার ব্যালকনি ধসে পড়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুইজন প্রকৌশলী ও একজন নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন। দুর্ঘটনার পর যশোর পৌরসভা একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে শহরের সার্কিট হাউজপাড়ায় অবস্থিত ‘ইকবাল মঞ্জিল’ নামের ভবনটি নির্মাণ করছিল ‘বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যা জমির মালিকদের পারিবারিক কোম্পানি।
নিহতরা হলেন—প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান (৩৫), সাইট ইঞ্জিনিয়ার আজিজুর রহমান (৩৫) এবং সাব-কন্ট্রাক্টর兼হেড মিস্ত্রি নুরু মিয়া (৪৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুর্ঘটনার সময় প্রকৌশলী দু’জন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মিস্ত্রি নুরু মিয়াকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই ব্যালকনিটি ধসে নিচে পড়ে যায়। বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে আশপাশ। স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আহত তিনজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকার বাসিন্দা ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক তমাল আহমেদ বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি তিনজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে স্থানীয়রা মিলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠালেও তাদের বাঁচানো যায়নি। তার অভিযোগ, নির্মাণসাইটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সদ্য পদত্যাগকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান। তিনি বলেন, “নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ব্যালকনিতে ব্যবহার করা হয়েছে চিকন রড এবং ছাদের রডের সঙ্গে ব্যালকনির রডের ছিল না কোনও সংযোগ—এটা আসলে হত্যাকাণ্ড।”
এ দুর্ঘটনার পর নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, “দুর্ঘটনার পর আমরা একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছি। নির্মাণে ত্রুটি প্রমাণিত হলে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত জানান, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নিহত মিজানুর রহমান দিনাজপুর, আজিজুর রহমান কুষ্টিয়া ও নুরু মিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। তাঁরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ভবন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।