28 C
Khulna
Wednesday, July 9, 2025

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীতে টানা ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজানের পানির ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১৪টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পড়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, পরশুরামের মুহুরী নদীতে বিপৎসীমা ১২.৫৫ মিটার হলেও মঙ্গলবার রাত ১০টায় নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.৯২ মিটার, অর্থাৎ বিপৎসীমার ১.৩৭ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ১৫ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে প্রায় ৬.৯২ মিটার বা ২২ ফুট ১০ ইঞ্চি।

আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ফেনীতে, যা চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ।

বাঁধ ভাঙনের বিস্তারিত:

মুহুরী নদী: পরশুরামের জঙ্গলঘোনায় ২টি, অলকায় ৩টি, শালধরে ১টি এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুরে ১টি।

সিলোনিয়া নদী: পরশুরামের গদানগরে ১টি এবং ফুলগাজীর দেড়পড়ায় ২টি।

কহুয়া নদী: পরশুরামের সাতকুচিয়ায় ২টি, বেড়াবাড়িয়ায় ১টি এবং ফুলগাজীর দৌলতপুরে ১টি স্থানে ভাঙন হয়েছে।

বাঁধ ভাঙার ফলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের পাশাপাশি ফুলগাজী ও পরশুরামে বহু বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাব-স্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার পরিধি আরও বাড়তে পারে।

পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার বাসিন্দা জাকিয়া আক্তার বলেন, “রাত ৮টার দিকে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। গত বছরও সব হারিয়েছি, এবারও সেই দৃশ্য দেখতে হলো।”

অন্যদিকে স্থানীয়রা পাউবোর কর্মকর্তাদের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। মির্জানগরের রফিকুল ইসলাম বলেন, “বল্লামুখা বাঁধের প্রবেশ মুখ সময়মতো বন্ধ না করায় পানি ঢোকার সুযোগ পেয়েছে। প্রতিবছরই এমন দায়িত্বহীনতায় জনদুর্ভোগ বাড়ে।”

পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমান জানান, পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, তবে এখনো অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না।
ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, তিনটি নদীর চারটি স্থানে বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গেছে। শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে, তাদের জন্য খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার উপজেলার সব উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী দুই দিনও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে। ত্রিপুরার পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়তে পারে। ফলে নতুন করে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে।

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ