প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫
খুলনা ব্যুরো
খুলনা এখন কার্যত লাশের নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খুন, হামলা বা রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে অস্থিরতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, গত এক মাসে খুলনায় খুন হয়েছেন আটজন। উদ্ধার হয়েছে চারটি লাশ। প্রতিপক্ষের হামলা ও সহিংস ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ডজনখানেক মানুষ।
একের পর এক হত্যাকাণ্ড
৪ সেপ্টেম্বর: রূপসার রাজাপুর গ্রামে পারিবারিক কলহে দায়ের কোপে খুন হন পারভীন বেগম। একই রাতে জয়পুরে বি-কম্পানির সক্রিয় সদস্য ইমরান হোসেন মানিক (৩৪) গুলিতে নিহত হন।
৮ সেপ্টেম্বর: দাকোপে পূর্বশত্রুতার জেরে খুন হন রেখা রানী মণ্ডল (৪২)।
২০ সেপ্টেম্বর: ফুলতলার জামিরা বাজারে গণপিটুনিতে মারা যান চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন আলমগীর হোসেন রানা (৩৮)।
২৩ সেপ্টেম্বর: নগরীর কেডিএ ময়ূরী আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে দিনমজুর নারী মনোয়ারা বেগম সুপ্তির গলা কাটা লাশ উদ্ধার।
২৯ সেপ্টেম্বর: লবণচরা থানা এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের লাশ এবং একই রাতে রূপসা থেকে হাত-পা বাঁধা অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার।
৩০ সেপ্টেম্বর: দৌলতপুরে নিজ ঘরে গুলি করে হত্যা করা হয় তানভীর হাসান শুভকে (২৮)।
আহত ও হামলার ঘটনা
এ সময়ের মধ্যে অন্তত ১১ জন প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন।
৯ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়ায় গরু চুরির অভিযোগে তিনজন গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হন।
১২ সেপ্টেম্বর খালিশপুর বাজার রোডে যুবদল নেতা মাসুদ হোসেন (৪৫) কুপিয়ে জখম হন।
১৭ সেপ্টেম্বর রূপসায় জেলা বিএনপি নেতা আবু হোসেন বাবুর বাড়িতে বোমা ও গুলির হামলা চালানো হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর নগরীর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে অনিক নামে এক যুবককে গুলি করা হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর হাজী মালেক কলেজ এলাকায় গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপের সদস্য মুন্না আহত হন।
৩০ সেপ্টেম্বর রূপসার ইস্টার্ন জুট মিলে ধারালো অস্ত্রাঘাতে গুরুতর জখম হন ফয়সাল (২৬)।
উদ্ধার হওয়া লাশ
১ সেপ্টেম্বর: বটিয়াঘাটার কাজীবাছা নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ।
১৪ সেপ্টেম্বর: সদর থানার সামনে স্টার হোটেলের কক্ষ থেকে তৌহিদুর রহমান তুহিনের (৩৫) মরদেহ।
২৩ সেপ্টেম্বর: শিপইয়ার্ড পল্টুনের কাছে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ ভেসে ওঠে।
২৫ সেপ্টেম্বর: দাকোপের চুনকুড়ি খেয়াঘাট থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধার।
পুলিশের দাবি
কেএমপি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. রাশিদুল ইসলাম খান বলেন,
“খুলনায় যত হত্যা বা হামলার ঘটনা ঘটেছে, এর বেশিরভাগের নেপথ্যে রয়েছে মাদক। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।”
বিশ্লেষণ
অভ্যুত্থানের আগে খুলনার মাদক সিন্ডিকেট ছিল একক নিয়ন্ত্রণে। এখন সেই নিয়ন্ত্রণ ভেঙে গিয়ে সন্ত্রাসীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিশোর গ্যাং। ফলে খুলনা ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে মৃত্যুপুরীতে।