আওয়ামী নাশকতায় পুড়ল ১৪ বাস, ফুটল ১৭ ককটেল

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার মামলায় বৃহস্পতিবার রায়ের তারিখ ঘোষণা হতে পারে—এমন সম্ভাবনাকে ঘিরে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত চার দিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপির তথ্যানুসারে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত ঢাকা শহরে অন্তত ১৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং গত ১১ দিনে সারাদেশে ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বা হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।

রাজধানীতে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণ

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর দোলাইরপাড় মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে দুপুরে মিরপুর-১ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পাশের স্বর্ণালি চত্বরে বিস্ফোরকযুক্ত চারটি পটকা উদ্ধার করে পুলিশ। গত কয়েক দিনে কাকরাইল চার্চ, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, মিরপুর-২, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডিতে ধারাবাহিকভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

সব ঘটনার ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা দ্রুত এসে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ও তদন্ত

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানান, রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং হামলাকারীদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকা মহানগরীতেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৪৪ জন ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু হামলাকারীই নয়—নাশকতার পেছনে অর্থায়নকারী ও পরিকল্পনাকারীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। র‌্যাব ও ডিএমপি একযোগে রাজধানীজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালাবদ্ধ একাডেমিক ভবন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি একাডেমিক ভবনের ফটকে তালা ঝোলানো হয়েছে ১৩ নভেম্বরের লকডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি অংশ।

এ ঘটনায় ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বুধবার ডাকসু মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজধানীর বাইরে নাশকতার চিত্র

গাজীপুরের ভোগড়া পাইপাস, চক্রবর্তী এবং শ্রীপুরে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। সাভারের নরসিংহপুরে নারী ও শিশু হাসপাতালের সামনে আরেকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের এক পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে বুধবার দুপুরে শতাধিক পেট্রোল বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে নাশকতার উদ্দেশ্যে এগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছিল।

খুলনার বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের শিবালয়ে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে লকডাউন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির অভিযোগে মহিলা লীগের নেত্রীসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

উচ্চমাত্রার সতর্কতা

১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় এবং গণপরিবহনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহজনক মোটরসাইকেল তল্লাশি, অতিরিক্ত টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, সাম্প্রতিক ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ফ্ল্যাশ মিছিল—সবই পূর্বপরিকল্পিত নাশকতার অংশ এবং উদ্দেশ্য শহরে আতঙ্ক তৈরি করা।

  • শেয়ার করুন