প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫
একদিন-দুইদিন কিংবা ২-১ বছর নয়, গুণে গুণে ২২টা বছরের অপেক্ষা। অবশেষে হামজা-শমিত-জায়ানদের হাত ধরে অবসান হলো সেই অপেক্ষার। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সেই একই স্টেডিয়ামে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ, যে মাঠে ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারত বধ করেছিল লাল-সবুজের দল।
২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে আনন্দে যেন বাঁধনহারা বাংলাদেশের প্রতিটা ফুটবলার থেকে শুরু করে কোটি বাঙালি ফুটবল ভক্তরা। হামজা-শমিতদের হাত ধরে বদলে গেছে বাংলাদেশ দল।
ছোট বেলা থেকে শ্রীমঙ্গলে যখন আসতেন শমিত সোমের পরিচয় ছিলো ভিন্ন। তখন পারিবারিক পরিমণ্ডলেই কাটত ছুটির সময়। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে শমিত এলেন তিনবার, তবে এবার ভিন্ন পরিচয়, ব্যস্ততাও ভিন্ন মাত্রায় হওয়ায় নিজ বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। অবশেষে ভারতকে হারানোর পরদিন শ্রীমঙ্গল ফিরে অন্যরকম অনুভূতিতে ভাসলেন জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার।
শমিতের জন্ম কানাডায়, সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। কানাডা লিগের ক্লাব ক্যাভালরি এফসিতে খেলছেন অনেকদিন ধরে। বাবা-মায়ের সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সহজেই পেয়ে যান শমিত। চলতি বছর লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয় তার।
মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারানোর ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শমিত। বাংলাদেশের জার্সিতে এটিই শমিতের প্রথম জয়।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টায় সিলেট থেকে সড়কপথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান শমিত সোম। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন তার পরিবারের লোকজনসহ পাড়া প্রতিবেশীরা। দীর্ঘদিন পর তিনি তার গ্রামের বাড়িতে আসায় বাড়ির লোকজন আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেন। শমিত সোমও দীর্ঘদিন পর পরিবারের লোকজনকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত।
শমিত সোমের পরিবার জানিয়েছে, শমিত সোম বুধবার একরাত বাড়িতে থেকে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকায় চলে যাবেন। এশিয়ান কাপ ফুটবলে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ জয়লাভ করায় শমিত সোমের পরিবার পরিজন সবাই খুশি। সেই সাথে তাকে পরিবারে পেয়ে তার একমাত্র বড় চাচা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহন লাল সোম, চাচি ও চাচাত বোন মেনেকা সোম খুবই খুশি।
বড় চাচা মোহন লাল সোম আপ্লূত হয়ে জানান, একদিকে বাংলাদেশের জয়লাভ আর অন্যদিকে শমিতের বাড়িতে আসা, ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। তবে তিনি বলেন, সোম পরিবার দেশের মুক্তিযোদ্ধে যেমন অবদান রেখেছে, অমনি দেশের জাতীয় ফুটবল দলে অবদান রাখছে।
শমিত আসছেন জেনে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, স্বজন, বন্ধুদের ভিড় বাড়ে তার বাড়িতে। সেখানেই মেটান সবার আবদার। শমিত জানান, ‘শ্রীমঙ্গল এসে অনেক ভালো লাগছে। আমি তো তিনবার (জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর) আসলাম বাংলাদেশে। এখানে আসতে পারি নাই আগে। এবার এখানে সময় কাটাতে পেরে খুশি লাগছে।’
এবার এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব পেরুতে না পারলেও হামজা-শমিতরা আসায় নতুন উদ্দীপনা ঠিকই তৈরি হয়েছে ফুটবলে। শমিতের কণ্ঠেও ইতিবাচক সুর, ‘আমরা একটু একটু করে প্রতি ম্যাচে উন্নতি করছি। পারফরম্যান্স ভালো হলেও রেজাল্ট আমাদের পক্ষে আসছিল না। শেষমেষ গতকাল আমরা জিতেছি। আমরা কোনো গোল হজম করিনি। তো আগামী বছরের দিকে তাকিয়ে এগুলো ইতিবাচক দিক।’
শমিত আরও বলেন, ‘সামনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আসছে, সেখানে যেন আমরা ভালো করতে পারি। এরপর আবার এশিয়ান কাপ, বিশ্বকাপ… সেগুলোতে কোয়ালিফাই করার জন্য যেন আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল হয়ে উঠতে পারি। বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ আমি মনে করি ভালো। সাফল্য আসবে।