জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য ও স্মরণীয় মুহূর্ত। ইসলামী অঙ্গনের বিভিন্ন দল ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আজকের মহাসমাবেশে যে ঐক্যের সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছে, তা এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা। চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে যারা আজ একমঞ্চে একত্রিত হয়েছেন, তারাই এ ঐক্যের রূপরেখা নির্মাণে কান্ডারীর ভূমিকা পালন করছেন। এই ঐতিহাসিক ঐক্য গঠনে চরমোনাই পীরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান—আপনার দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। একই কথা নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) উদ্দেশ্যেও বলেন তিনি। দেশের জনগণ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি) পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। নির্বাচন পরিচালনায় নিরপেক্ষতার অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে। এখনই পক্ষপাতিত্বের কিছু আভাস দেখা যাচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দুই হাজার ছাত্র-জনতার ত্যাগ, হাজারো জেল-জুলুম, হত্যা ও ফাঁসির বিপরীতে যে আন্দোলন আজ সফলতার পথে, আমরা তা ব্যর্থ হতে দেব না।
নির্বাচনে সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, একটি দলের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।
তিনি গণহত্যার বিচার দাবি করে বলেন, দিল্লির সঙ্গে আঁতাত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে পুনরায় সেবাদাসত্ব কায়েমের ষড়যন্ত্র করছেন, এর বিচার অবশ্যই হতে হবে।
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সংস্কারের প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধান্বিত। তারা ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার বাস্তবায়নের কথা বলছেন। কিন্তু কে বলেছে তারা ক্ষমতায় যাবেন? আমরা আর কোনো নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম দেখতে চাই না। এক কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে, এবং জুলাইয়ের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চরমোনাই পীরকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় চরমোনাই পীর যে উদারতা ও নেতৃত্ব দেখিয়েছেন, তা একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে। একমঞ্চে সব ইসলামী শক্তিকে দেখে দেশের গ্রাম-গঞ্জে ঐক্যের জোয়ার বইছে। তিনি সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।