26.4 C
Khulna
Monday, July 7, 2025

ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও করা হয়

মুরাদনগরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বেই ঘটেছে বলে অভিযোগ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও সেই ঘটনার ভিডিও ধারণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগের মূলহোতা হিসেবে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতার নাম উঠে আসছে। এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও বিবরণ
সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী সৌদি প্রবাসী। স্থানীয় যুবক ফজর আলীর সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে একদল যুবক তাদেরকে ধরার জন্য আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল।
পরিকল্পনামাফিক, ফজর আলী ঘরে প্রবেশের পর সুমন ও তার সঙ্গীরা তাদের আটক করে। প্রথমে ফজর আলীকে বেধড়ক মারধর করে তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো হয় এবং পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর বক্তব্য
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, “এটা মূলত একটি পরকীয়ার ঘটনা। ফজর আলী ও ওই নারীর মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা তাদের হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে।” তিনি এই ঘটনায় জড়িত সুমনসহ সকলের এবং পরকীয়ার জন্য ফজর আলীরও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিম জানান, ফজর আলী ও ওই নারীর পরকীয়ার বিষয়টি আগে থেকেই জানাজানি ছিল। তিনি বলেন, “সেদিন রাতে তারা পারস্পরিক সম্মতিতে এক হয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন ও তার ১০-১২ জন সহযোগী পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে বিবস্ত্র ও নির্যাতন করে, যার মূল নায়ক সুমন।”
বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালামের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে একটি گروه দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। তিনি বলেন, “কারা পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে, তা খুঁজে বের করার জন্য তারা রাতে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। এসব ‘ফিটিং কেস’ তৈরি করে মানুষকে জিম্মি করে তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।”
তবে, এই বিষয়ে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশের বক্তব্য ও পদক্ষেপ
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনও রয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মূলত ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের নেতৃত্বেই ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।”
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ফজর আলীসহ ভুক্তভোগীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই পৈশাচিক ঘটনার নেপথ্যে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের গোয়েন্দা ও তদন্তকারী দল মাঠে কাজ করছে।”

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ