প্রেমের টানে চীন থেকে খুলনায়, দাকোপে চীনা যুবকের সঙ্গে পিংকির নতুন জীবনের শুরু
খুলনার প্রত্যন্ত উপজেলা দাকোপে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী প্রেমের গল্প, যেখানে ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইল দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ধর্ম, জাতি কিংবা জাতীয়তার পার্থক্যও থামাতে পারেনি দুই হৃদয়ের টান। এই প্রেমের গল্পের নায়ক চীনের যুবক থাম্বু জাও আর নায়িকা দাকোপের খ্রিষ্টানপল্লির তরুণী পিংকি সরদার।
দুই মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের প্রথম পরিচয়। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, যা রূপ নেয় গভীর প্রেমে। একসময় তারা সিদ্ধান্ত নেন এই সম্পর্ককে চূড়ান্ত পরিণতি দেওয়ার। সেই ভালোবাসার টানেই থাম্বু পাড়ি জমান বাংলাদেশে।
সম্প্রতি সব আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এক সপ্তাহ আগে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে নবদম্পতি খুলনার দাকোপে পিংকির বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। নতুন পরিবেশ আর নতুন সংসার—সব মিলিয়ে তারা বেশ খুশি।
পিংকি সরদার জানান, “আমরা একে অপরকে খুব ভালো বুঝি। থাম্বু খুব সৎ ও যত্নশীল। এখন আমাদের জীবন অনেক আনন্দে কাটছে।”
ভাষাগত কিছু সমস্যায় শুরুতে থাম্বু কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও, প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে তিনি পিংকির পরিবারের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করছেন। পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীরাও নতুন এই বিদেশি অতিথিকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। প্রতিদিনই এলাকার মানুষ ভিড় করছেন তাদের বাড়িতে, চীনা জামাইকে এক নজর দেখার জন্য।
থাম্বু বলেন, “ফেসবুকে পিংকির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই বুঝি সে ভালো মানুষ। আমরা প্রেম করি, পরে বিয়ে করি। এখন ওর বাড়িতে আছি, এখানকার পরিবেশ ভালো লেগেছে।”
খাবারেও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন থাম্বু। যদিও শুরুতে মসলা ও রান্নার পার্থক্য তাকে চমকে দিয়েছিল, এখন তিনি উপভোগ করছেন দেশীয় খাবার। ভবিষ্যতে স্ত্রীকে নিয়ে চীন সফরের ইচ্ছা রয়েছে তার। পাশাপাশি, বাংলাদেশেই বসবাস করে একটি ছোট ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনাও করেছেন তিনি।
প্রতিবেশীরা বলছেন, “এই যুগে এমন সাহসী প্রেম বিরল। ছেলেটা ভদ্র, শান্ত। আমরা চাই তারা সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাক।”
ভালোবাসার এই গল্প দাকোপবাসীর হৃদয়ে জাগিয়েছে উষ্ণতা আর উৎসাহ—যেখানে আন্তঃসাংস্কৃতিক ভালোবাসা পেয়েছে সামাজিক স্বীকৃতি ও মানবিক মর্যাদা।