Home সারাবিশ্ব ইসরায়েলের সঙ্গে বড়সড় যুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

ইসরায়েলের সঙ্গে বড়সড় যুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

0

১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে এটিকে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি হিসেবে নয়, বরং একটি ‘কৌশলগত বিরতি’ হিসেবে দেখছে তেহরান। ইরান বলছে, তারা এখন নিজেদের নতুন করে গুছিয়ে নিচ্ছে এবং সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

যুদ্ধের পর ইসরায়েল ‘বিজয়’ দাবি করলেও ইরানও নিজেদের পরাজিত মনে করছে না। বরং তারা এই সংঘাতকে ‘ইমপোজড ওয়ার’ বা ‘চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করছে, যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত’ রয়েছে বলে দাবি তাদের। ঠিক যেমন ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ধৈর্যের কৌশল অবলম্বন করেছিল তেহরান, এবারও তারা সময়কে অস্ত্র করে তুলতে চায়।

সামরিক পুনর্গঠন ও প্রস্তুতি

যুদ্ধে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামো, সামরিক কমান্ড ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের বড় ক্ষতি হয়। তবে পাল্টা হামলায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল ধরাতে সক্ষম হয় ইরান।

এখন তারা দ্রুত সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে:

স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মজুত বাড়ানো

হাইপারসনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ‘ফাতাহ’ ও ‘খাইবার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন

বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন

এছাড়া, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা অনুধাবন করে ইরান এখন রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সু-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। একইসঙ্গে চীনের জে-১০ ও পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

নজরদারি প্রযুক্তিতে ঘাটতি

যুদ্ধে এক বড় দুর্বলতা দেখা গেছে ইরানের আকাশভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থায়। এই ঘাটতি পূরণে তারা রাশিয়া ও চীনের উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহে আগ্রহী। কারণ, আধুনিক যুদ্ধে গোয়েন্দা ও নজরদারি সক্ষমতা এখন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কূটনৈতিক ও আইনি পাল্টাঘাত

সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ইরান এখন কূটনৈতিক ও আইনি লড়াইয়েও সক্রিয় হচ্ছে। তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে, পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার আগে ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না। এমনকি তারা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে সহযোগিতাও স্থগিত করেছে। গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এখনো অক্ষত রয়েছে, যা ভবিষ্যতে কৌশলগত চাপের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

সময়কে কৌশল হিসেবে ব্যবহার

তেহরান এখন যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে ধাপে ধাপে সামরিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ধারণা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে আরও চাপে পড়বে। সেই সুযোগেই ইরান নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করতে চায়।

তাদের কাছে ‘কৌশলগত ধৈর্য’ মানে কেবল ধৈর্য নয়—এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধের অংশ। এখন দেখার বিষয়, সময়ের এই খেলায় শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হয়—তেহরান, না তেলআবিব।

Exit mobile version