Home সারাবিশ্ব হঠাৎ জোরে ঘুরছে পৃথিবী

হঠাৎ জোরে ঘুরছে পৃথিবী

0

গত তিন দিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত চলছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতিও। এই জলাবদ্ধ ও দুর্যোগপূর্ণ সময়েও মানুষ বুঝে ওঠেনি, তারা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে। ২০২৫ সালের ৯ জুলাই পৃথিবী পেরিয়ে এসেছে স্মরণকালের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দিন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেনি—কারণ এমন পরিবর্তন এতটাই সূক্ষ্ম যে মানব অনুভূতির বাইরে।

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সাধারণত পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড। কিন্তু ৯ জুলাই দিনটির দৈর্ঘ্য ছিল গড় দিনের তুলনায় ১.৩ মিলিসেকেন্ড কম। এর ফলে দিনটি স্থান করে নিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের তৃতীয় সবচেয়ে ছোট দিনের তালিকায়।

সবচেয়ে ছোট দিনের রেকর্ডটি ২০২৪ সালের ৫ জুলাইয়ের দখলে—সেদিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড কম। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই, যার দৈর্ঘ্য ছিল ১.৩১ মিলিসেকেন্ড কম। এ বিষয়গুলো নজরদারি করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস (IERS)। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আসন্ন ২২ জুলাই ও ৫ আগস্টের দিনদুটি ৯ জুলাইয়ের চেয়েও ছোট হতে পারে। ২২ জুলাই দৈর্ঘ্য কমতে পারে ১.৩৮ মিলিসেকেন্ড, আর ৫ আগস্ট তা হতে পারে রেকর্ড ১.৫১ মিলিসেকেন্ড কম।

এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই দিনগুলোতে চাঁদ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে। ফলে চাঁদের মহাকর্ষ বল কমে যাওয়ায় সাগরে জোয়ার-ভাটার টানও কমে যাবে, যা পৃথিবীর ঘূর্ণনে সামান্য দ্রুততা তৈরি করবে।

তবে এই পার্থক্য মানুষের বোঝার মতো নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের চোখের একবার পলক ফেলতে সময় লাগে প্রায় ১০০ মিলিসেকেন্ড—তার তুলনায় দিনের দৈর্ঘ্য কমার এই পরিবর্তন প্রায় অদৃশ্য। যদিও পার্থক্য অতি ক্ষুদ্র, তবু বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে পৃথিবীর ঘূর্ণন অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত হয়েছে। ২০২০ ও ২০২২ সালে পারমাণবিক ঘড়ির সাহায্যে এটি পরিমাপও করা হয়।

এই পরিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন সম্ভাব্য কারণ নিয়ে গবেষণা চলছে—বিশেষ করে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের অস্থিরতা, বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন, ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ ইত্যাদি।

বিজ্ঞানীরা মনে করিয়ে দেন, পৃথিবীর ঘূর্ণন কখনোই পুরোপুরি নিরবিচারে নয়। গড়ে প্রতি শতাব্দীতে পৃথিবীর ঘূর্ণন ২ মিলিসেকেন্ড করে ধীর হয়ে থাকে। অর্থাৎ, ২৫ কোটি বছর আগে যখন ডাইনোসররা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত, তখন একদিন ছিল মাত্র ২৩ ঘণ্টা। এমনকি তাম্র যুগেও দিনে গড়ে ০.৪৭ সেকেন্ড কম সময় থাকত। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০ কোটি বছর পর একদিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘণ্টায় পৌঁছাবে।

এই ধীরগতির প্রধান কারণ ‘টাইডাল ব্রেকিং’—চাঁদের মহাকর্ষজ টানের কারণে সাগরের জল ফেঁপে উঠে জোয়ার সৃষ্টি হয়, যা পৃথিবীর ঘূর্ণনে বাঁধা দেয়। তবে যখন চাঁদ দূরে থাকে, এই টান দুর্বল হয় এবং পৃথিবী কিছুটা দ্রুত ঘুরতে থাকে।

সুতরাং, সময় যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, এ পরিবর্তনগুলো মহাজাগতিক গতিবিধির গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। সূত্র: মেইল অনলাইন।

Exit mobile version