জুলাই-আগস্টে সংঘটিত এক অভ্যুত্থান সংক্রান্ত মামলায় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ১৫ জন নেতাকর্মীর নাম বাদ দিতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাকে চিঠি দিয়েছে ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি। ২৫ ডিসেম্বর সংগঠনটির সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিছবাহর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে মামলার (দক্ষিণ সুরমা সিআর মামলা নম্বর- ৩৭৪/২০২৪) বাদী সাহেদ আহমদের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করে পুলিশকে ‘আসামিদের অব্যাহতি’ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, “বর্ণিত আসামিরা ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সমর্থক হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হলো।”
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই ১৫ জনের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বেও রয়েছেন।
তালিকায় উল্লেখিতরা হলেন: আসঝার মিয়া (১৪ নম্বর আসামি), আফছর মিয়া (২২), রুবেল আহমদ (৪৪), মাযহারুল ইসলাম মজনু (৪১), অলিদ মিয়া (৪৮), বাবুল মিয়া (৬৭), পিন্ট (সাইদুর রহমান পিন্টু, ৬৯), আত্তর আলী (৭২), আ. ওয়াহাব (৭৩), আ. শহীদ (৭৬), আমির আলী (৭৭), নাবিল আহমদ (৭৮), শায়েস্তা আল মামুন (৮০), আফরুজ মিয়া (৮৬), সাহেদ আহমদ (৯০)।
তাদের মধ্যে সাইদুর রহমান পিন্টু সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সদস্য এবং আমির আলী স্থানীয় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিছবাহ দাবি করেন, “এরা সবাই বিএনপির সমর্থক। একটি কমিটির মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য থানায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, কেন্দ্রীয় বা বিভাগীয় পর্যায় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা ছিল না, স্থানীয় সিদ্ধান্তে চিঠিটি দেওয়া হয়।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দীন প্রথমে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। পরে বলেন, “সাধারণ সম্পাদক হয়তো দিয়েছেন। আমি জানি না।” কিন্তু কিছু সময় পর সাধারণ সম্পাদক নিজেই দাবি করেন, তারা এমন কোনো চিঠি দেননি। বরং আগের চিঠির স্বাক্ষর ও সিল জাল করা হয়েছে বলে একটি নতুন চিঠি পুলিশকে দেন।
দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, “আসামিদের বাদ দিতে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দেওয়া আবেদন আইনসম্মত নয়। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাদেরই বিচার হবে। আবেদনের ভিত্তিতে কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।”
বর্তমানে ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। চিঠির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে কিনা এবং চিঠির পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কী—তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সূত্র: সমকাল