জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “গত ৫৪ বছরে একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের পৃষ্ঠায় মাওলানা ভাসানীর অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি না থাকলে শেখ মুজিবও গড়ে উঠতে পারতেন না। বাংলাদেশে কেবল একজন নয়, একাধিক জাতির পিতা রয়েছেন—তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাওলানা ভাসানী।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এটি ছিল ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা আজকের এই সমাবেশে মাওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তিনি কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অথচ তাকে ইতিহাসে প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, “ভাসানী শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো উপমহাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার রাজনীতি শুরু হয়েছিল আসাম থেকে, যেখানে তিনি বাঙালি মুসলিম কৃষকদের ভূমি অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করেছিলেন। আজও আসামের বাঙালিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বেঁচে আছে। ভাসানীই প্রথম ব্যক্তি যিনি কাগমারী আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিদায়ের ডাক দিয়েছিলেন।”
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভাসানীর একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি স্মরণ করে নাহিদ বলেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘আমার পিঞ্জিরা ভেঙেছি দিল্লির গোলামী করার জন্য নয়।’”
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নামে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) স্বীকৃতি দেওয়ার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের তাঁতশিল্পকে রক্ষা করতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে—এই আদর্শে আমরা কৃষকদের সংগঠিত করতে চাই, যেন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে।”
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানী, টাঙ্গাইল জেলার মুখ্য সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে অংশ নিতে নেতাকর্মীরা টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের সামনে থেকে একটি পদযাত্রা বের করেন, যা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে সোমবার (২৮ জুলাই) রাতে নাহিদ ইসলামসহ দলের শীর্ষ নেতারা টাঙ্গাইলের সার্কিট হাউজ ও বিভিন্ন গেস্ট হাউজে অবস্থান করেন এবং রাতে সন্তোষে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা ও জিয়ারত করেন।