Home রাজনীতি দলের উচিত ছিল আমাদের পক্ষে দাঁড়ানো: হাসনাত আবদুল্লাহ

দলের উচিত ছিল আমাদের পক্ষে দাঁড়ানো: হাসনাত আবদুল্লাহ

0

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে ছিল নানা কর্মসূচি। ঠিক সে সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে গেছেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্সবাজার সফর ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠলেও, বিষয়টি অস্বীকার করেছে দলটি।

বৃহস্পতিবার তারা এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। এতে জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে তাদের আবেগ ও অভিমান প্রকাশ পেয়েছে। তবে তারা এও বলেছেন, নিজের মতো করে একান্ত সময় কাটানো অথবা কোথাও ঘুরতে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়।

দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি-গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’

ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনায় তিনি লিখেছেন, ৫ আগস্ট তার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও তাকে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি। ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে তাকে জানান, তিনি স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে ২ দিনের জন্য ঘুরতে যাবেন। তিনি দলের আহ্বায়ককে বিষয়টি অবহিত করতে বলেন। নাসীরুদ্দীন লেখেন, ৪ আগস্ট রাতে দলীয় কার্যালয়ে আমি এনসিপির আহ্বায়কের (নাহিদ ইসলাম) সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। একই রাতে আমি দলের সদস্য সচিবের (আখতার হোসেন) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে (জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান) দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনো কাজ নেই। আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সফরসঙ্গী হিসাবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনীম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।

কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত (ঢাকায় নিযুক্ত) পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। তবু দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব দিচ্ছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন হিসাবে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট-ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ, ইতিহাস কেবল বৈঠকে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।

এদিকে দলের আরেক শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দলের উচিত ছিল আমাদের পক্ষে দাঁড়ানো। গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া। তার পরিবর্তে এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এই সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই তাদের মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি।’

হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে। উপরন্তু, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাইবোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি।’ ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে রাষ্ট্রীয় উদ্যাপনে যোগ না দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ পাঁচ নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনীম জারা এবং খালেদ সাইফুল্লাহ কক্সবাজারে ঘুরতে যান। হঠাৎ তাদের কক্সবাজার ভ্রমণ রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে দলীয় ফোরাম থেকে পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়।

Exit mobile version