বাংলাদেশের খুলনা জেলার বটিয়াঘাটার সাত নম্বর আমি পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ১২ বছর বয়সী কিশোরীকে ভারতে নিয়ে যায় পাচারকারীরা। এরপর সেখানে ২২৩ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিবিসির বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের মহারাষ্ট্রের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হারমোনি ফাউন্ডেশন’ এবং ‘এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ এই অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইও। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হারমোনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্রাহাম মাথাই বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি যে, সে স্কুলের পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ফেল করেছিল। বাড়িতে বাবা-মা বকবেন, সেই ভয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এক পরিচিত নারী কিশোরীটিকে কাজের লোভ দেখিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসে। সেখানেই তার জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র বানানো হয় এবং তারপরে বিমানে চাপিয়ে তাকে মুম্বাই নিয়ে আসা হয়।’তিনি আরও বলেন, ‘তাকে জোর করে, অত্যাচার চালিয়ে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হতো। গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের মীরা-ভায়ান্দার এলাকায় তার ওপরে চলেছিল এই অমানুষিক অত্যাচার।’
আব্রাহাম মাথাই বলেন, ‘কিশোরীটি যখন আমাকে বলছিল, গত তিন মাসে ২২৩ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে, ওর চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম।’ জানা যায়, কৃত্রিমভাবে শারীরিক গঠন বৃদ্ধির জন্য ওই কিশোরীটিকে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ এবং পুলিশের মানবপাচার রোধ ইউনিট এক অভিযান চালিয়ে গত ২৩ জুলাই কিশোরীটিকে উদ্ধার করে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার নাইগাঁও থেকে।মীরা-ভায়ান্দার-ভাসাই-ভিরার পুলিশের কমিশনার নিকেত কৌশিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নয়জনকে তারা গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। এদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও দুইজন নারী বাংলাদেশের নাগরিক। পুরো পাচার চক্রটিকে ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। তার পরিবারের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা।
এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের শ্যাম কুম্বলে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মুম্বাই থেকে তাকে গুজরাটের নাদিয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে এক ব্যক্তি ওই কিশোরীকে কৃত্রিমভাবে শারীরিক গঠন বৃদ্ধির ইনজেকশন দেয়, তাকে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখা হয়। ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। যে পাচারকারীরা ধরা পড়েছে, আর ওই কিশোরী–সবার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, গত তিন মাসে ২২৩ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে। ওই কিশোরীটিকে গুজরাটের চারটি হোটেল এবং পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপরে তাকে মহারাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়।’উদ্ধার করার পরে ওই কিশোরী এখন একটি সেইফ হোমে রয়েছে।
কীভাবে উদ্ধার হলো এই কিশোরী:
গত সপ্তাহে তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ শহরে আরেক বাংলাদেশি কিশোরী স্থানীয় থানায় এসে সাহায্য চায়। ঢাকার বাসিন্দা ১৫ বছরের ওই কিশোরীকে তারই এক প্রতিবেশী ভারতে নিয়ে এসে দেহ ব্যবসায় নামিয়েছিল বলে অভিযোগ করে। ওই কিশোরীর কাছ থেকে খবর পেয়ে হায়দ্রাবাদ পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে একটি আন্তর্জাতিক যৌন ব্যবসার চক্র খুঁজে পেয়েছে।
এক বাংলাদেশি কিশোরীকে পাচার করে আনা হয়েছে, এই খবর পেয়ে মীরা-ভায়ান্দার-ভাসাই-ভিরার পুলিশের মানব-পাচাররোধ ইউনিট যখন তল্লাশিতে যায়, তাদের সঙ্গেই ছিলেন ‘এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ এর শ্যাম কুম্বলে। দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের পুলিশ গত শুক্রবার একটি ঘটনার কথা জানিয়েছে, যেখানে ১৫ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি কিশোরী নিজেই সাহায্য চেয়ে থানায় এসে হাজির হয়েছিল। সেদিন সকাল সোয়া আটটা নাগাদ বান্ডলাগুড়া থানায় হাজির হয় ওই কিশোরী। সে পুলিশকে জানায় যে তার বাড়ি ঢাকায় এবং তার এক প্রতিবেশী কলকাতায় বেড়াতে নিয়ে যাবে বলে তাকে পাচার করে দেয় এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে।
চন্দ্রায়নগুট্টার সহকারী পুলিশ কমিশনার এ সুধাকর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে কলকাতায় বেড়াতে নিয়ে আসার নাম করে ওই কিশোরীকে হায়দ্রাবাদে নিয়ে এসে জোর করে যৌনকর্মে নামানো হয়। তার দেওয়া তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে বান্ডলাগুড়া ও মেহদিপটনমের দুটি পৃথক বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ওই চক্রের সদস্য দুই নারীকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের তিনজন নারীকেও উদ্ধার করা হয়, যাদের জোর করে যৌনকর্মে নামানো হয়েছিল।
এছাড়া একজন অটোরিকশা চালককেও গ্রেফতার করা হয়েছে, যে ওই বাংলাদেশি কিশোরী এবং অন্য নারীদের খদ্দেরদের কাছে নিয়ে যেত।
ভারতের পাচার হওয়া ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের দাবি, কয়েকদিন আগে মহারাষ্ট্র থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে গত দুইদিন ধরে আর কোনো খোঁজখবর দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। পরিবারটি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, মেয়েকে উদ্ধারের জন্য সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তারা দ্রুত কিশোরীকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।