বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা বলেছেন, গত বছর জুলাই গণআন্দোলনের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে, বিরাজিত পরিস্থিতি তা ধারণে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা শঙ্কিত এ কারণে যে অব্যাহত ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে’ বিপর্যস্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এই নতুন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এভাবে চলতে পারে না।
শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শনিবারের শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সভাপতি বাসুদেব ধর, উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, সহ-সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার কথিত ও পরিকল্পিত অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি লালমনিরহাট ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনা উল্লেখ করতে হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই নতুন কৌশল গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, তাঁর বিচার ও যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তাঁরা; কিন্তু এর আগে নিশ্চিত হতে হবে, কাজটি সত্যিই তিনি করেছেন কিনা। দুঃখের সঙ্গে তাঁরা লক্ষ্য করছেন যে, নিশ্চিত হওয়ার আগেই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে নির্বিচারে পাড়ার পর পাড়ায় হামলা চালানো হচ্ছে। লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রকাশ্যে।
এতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এসেছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশকে একটি পরিবার হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেদনার্ত চিত্তে লক্ষ্যে করা গেছে, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত প্রায় এক ডজন কমিশনের মধ্যে দুটিতে মাত্র দুজন সংখ্যালঘু সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সংবিধান সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো অবস্থান নেই। সংখ্যালঘুদের কথা শুনতে চাওয়া হয়নি। এই প্রবণতা এক পরিবারের ধারণার সঙ্গে যায় না।
এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘুদের জীবনাচরণ হুমকির সম্মুখীন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারীরা রাস্তাঘাটে বের হলে নানাভাবে কটূক্তি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে আরও অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় সংখ্যালঘুরা হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।
জন্মাষ্টমীর দুই দিনের উৎসব উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, আগামীকাল শনিবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে, আগামীকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আয়োজিত গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন। দুপুর তিনটায় পলাশীর মোড়ে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন হবে।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, এবার এক নবযুগের সূচনা করবে এই ঐতিহাসিক মিছিল। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।
মতবিনিময় সভায় আরও বলা হয়, এক নতুন আঙ্গিকে ঐতিহ্যের নান্দনিক উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এই ঐতিহাসিক মিছিল প্রতিবছরের মতো একই পথ ঘুরে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। রাতে ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণ পূজার পর প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান হবে আগামী মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট)। সেদিন দুপুর তিনটায় আয়োজিত হবে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন মজুমদার।
জন্মাষ্টমী উৎসব ঘিরে নিরাপত্তা আশঙ্কা আছে কি না, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, সরকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, কোনো সমস্যা হবে না।