26.2 C
Khulna
Wednesday, September 3, 2025

খুলনা সিটি করপোরেশনে ৬০০ কোটি টাকার টেন্ডারে দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক মেয়র তালুকদার খালেক ও ১০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে

খুলনা, ৩ সেপ্টেম্বর: খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘিরে ৬০০ কোটি টাকার টেন্ডার বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ পেয়েছে, মেয়রের মেয়াদকালে একচেটিয়াভাবে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব কাজের মানও ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের।

দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেতে মেয়রের ঘনিষ্ঠ মহলের সহায়তায় প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া কাজ বণ্টনের সময় প্রকল্প মূল্যায়ন, যোগ্যতা যাচাই এবং কার্যসম্পাদন পর্যবেক্ষণের মতো মৌলিক নীতিমালাও মানা হয়নি।

তদন্তে উঠে এসেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়র খালেক নাম-বেনামে প্রায় ৮০ ভাগ ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছিলেন। এমনকি অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার করেও তিনি নিজেই প্রকল্পের কাজ করতেন। এসব কাজ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন আদায় ও ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে তিনি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

দুদক ইতোমধ্যে চিহ্নিত ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:

হোসেইন ট্রেডার্স (মালিক সেলিম হুজুর): প্রায় ৫২ কোটি টাকা

তাজুল ট্রেডার্স (মালিক যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলাম): প্রায় ৪০ কোটি টাকা

মেসার্স আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স (মালিক আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ): প্রায় ৪৫ কোটি টাকা

রোজা এন্টারপ্রাইজ: প্রায় ৩৬ কোটি টাকা

সর্বমোট এই ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে, যার প্রকৃতি ও বণ্টন প্রক্রিয়া এখন তদন্তাধীন।

দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠ এক পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেনদরবার ও কার্যাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। প্রায় সব ধরনের আলোচনা, দরপত্র প্রক্রিয়া এবং কমিশন নির্ধারণ এই কর্মকর্তার মাধ্যমে সম্পন্ন হতো।

এদিকে, ৫ আগস্টের পর থেকে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে খুলনা মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলাসহ এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে। একইসঙ্গে চলতি বছরের ৯ জুলাই দুদক তার বিরুদ্ধে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে। এছাড়া, তার স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধেও ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাজ পাওয়ার পদ্ধতি, অর্থের লেনদেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের মান ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা খতিয়ে দেখে দ্রুতই চার্জশিট প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে।

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ