প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৪২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে উত্থাপিত এই প্রস্তাব, যা ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ নামে পরিচিত, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। প্রস্তাবে স্পষ্ট করা হয়েছে—স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। বরং হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করে গাজার শাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরব লীগ ইতোমধ্যে প্রস্তাবটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের ১৭টি দেশ এ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিল। এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করা অপরিহার্য। এজন্য হামাসকে অবশ্যই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে ক্ষমতা ও অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে।
তবে ইসরায়েল জাতিসংঘের এই অবস্থানকে “লজ্জাজনক” বলে আখ্যায়িত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোর্সটেইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, সাধারণ পরিষদ এখন ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে’ পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল–শেখ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন জানাচ্ছে।
এমন এক সময়ে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো, যখন গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৩ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজা নগরীর নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে, এতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে, পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে নতুন পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার তিনি একটি চুক্তিতে সই করেন, যার আওতায় দখলকৃত এলাকায় ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ পশ্চিম তীরকে কার্যত দ্বিখণ্ডিত করবে এবং ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে আরও সংকীর্ণ করে তুলবে।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ এ বিষয়ে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। তিনি সতর্ক করে দেন, নেতানিয়াহুর এ পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকে ‘নরকের পথে ঠেলে দিচ্ছে’। একই সঙ্গে তিনি যেসব দেশ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।