বন্ধুত্ব কোনোদিনই “বিষাক্ত সাপ” ট্রাম্পের মতো ব্যক্তির সঙ্গে সম্ভব নয়: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে যত সমালোচনা, তার মাঝেও একটি ব্যতিক্রম রয়ে গেছে—তার কবিতা-প্রেম। বিশেষত দ্য স্নেক শিরোনামের একটি কবিতা, যা মূলত অস্কার ব্রাউন জুনিয়রের লেখা একটি গান। ট্রাম্প প্রায়ই জনসম্মুখে এটি আবৃত্তি করেছেন, এমনকি হোয়াইট হাউস গত বছর এটিকে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপান্তর করে।
কবিতায় এক ‘দয়ালু নারী’ এক জমে যাওয়া সাপকে আশ্রয় দেয়, কিন্তু সাপটি শেষে কৃতজ্ঞ হওয়ার বদলে নারীকে কামড়ে দেয়। ট্রাম্প এটি ব্যবহার করেছেন তার অভিবাসন নীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হিসেবে—অর্থাৎ বাইরের কাউকে অতিরিক্ত আশ্রয় দিলে সে ‘বিষাক্ত প্রতিশোধ’ নিতেই পারে।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বৈত সম্পর্ক

সম্প্রতি জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্যে আবারো দ্য স্নেক-এর ছায়া ফুটে ওঠে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা এই রূপককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
স্টারমার গত এক বছর ধরে ট্রাম্পকে নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্বাগত জানিয়েছেন—দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর, উইন্ডসর ক্যাসেলের ভোজ, চেকার্সে বিশেষ দিন কাটানো এবং রাজপরিবারের সঙ্গে আলোকচিত্রে অংশগ্রহণ। রাজা চার্লস ট্রাম্পকে ‘নিকটাত্মীয়’ বলেও অভিহিত করেন। অথচ দেশে ফিরে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যকে ‘পুরোনো দুনিয়ার নরকের দেশ’ আখ্যা দেন।
এই দ্বিমুখী অবস্থান কবিতার শেষ লাইনকে মনে করিয়ে দেয়: “তুমি আমাকে কেন কামড়ালে? তুমি জানো তোমার কামড় বিষাক্ত।”

বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা

ডাউনিং স্ট্রিট যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য টেক চুক্তিকে ‘রেকর্ড-ব্রেকিং বিনিয়োগ’ বলে প্রচার করেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এগুলো পুরোনো প্রকল্পের পুনরায় ঘোষণার মতো। সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকেরা এতে প্রত্যাশিত সুফল নাও পেতে পারেন।
বিশেষ করে এম২৫ মহাসড়কের পাশে ব্ল্যাকস্টোন ও গুগলের যে ডেটাসেন্টারগুলো গড়ে উঠছে, সেখানে স্থায়ী কর্মসংস্থান অত্যন্ত সীমিত হবে। নির্মাণকালে প্রায় ১,২০০ কর্মী লাগলেও, প্রতিটি সেন্টারে দীর্ঘমেয়াদে মাত্র ৪০ জন কাজ করবেন। এগুলো ডেটা সংরক্ষণের কেন্দ্র, উৎপাদনমুখী স্থাপনা নয়।

সমালোচনা ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

উত্তর নর্থাম্বারল্যান্ডে ব্ল্যাকস্টোনের ডেটাসেন্টার জটিলতা সৃষ্টি করছে। প্রায় ৫ লাখ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ১০টি পর্যন্ত সেন্টার গড়ে উঠবে, যা সিলিকন ভ্যালির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এআই বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া রিক্যাপ একে ব্রিটিশ মাটিতে “আমেরিকান সামরিক ঘাঁটির সমতুল্য” বলে অভিহিত করেছেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেমন টাওয়ার হ্যামলেটস ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে—অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহার ভবিষ্যৎ আবাসন প্রকল্পে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সাবেক ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ডেপুটি গভর্নর জন কানলিফও সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থাকে অস্ত্রে পরিণত করতে পারে, যা অমান্যকারী দেশগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

কবিতার মতোই ট্রাম্প ও তার সমর্থিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিশ্রুতিগুলোকে এখন অনেকেই ‘বিষাক্ত’ হিসেবে দেখছেন। বিনিয়োগ ও উন্নয়নের আড়ালে আসছে সীমিত কর্মসংস্থান, সম্পদের চাপ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। একসময় যে সাপকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেটিই যেন কামড়ে দিচ্ছে।

  • শেয়ার করুন