সব ধর্ম অবমাননা রোধে সমান আইন ও শাস্তিসহ ৪ দাবি হিন্দু যুব মহাজোটের

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

ঢাকা, ১০ অক্টোবর:
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকল ক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায্যতার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট। একই সঙ্গে দেশে বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন এবং আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এ দাবি জানান।

ধর্মীয় অবমাননা রোধে চার দফা দাবি

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু যুব মহাজোট চারটি দাবি উপস্থাপন করে—
১. সব ধর্মের অবমাননার জন্য সমান আইন ও শাস্তির বিধান করতে হবে।
২. ধর্ম অবমাননার অজুহাতে কোনো গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক হামলা চালালে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে।
৩. অতীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু এলাকায় সংঘটিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দায়ের করা মিথ্যা মামলার সব অভিযুক্তকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

‘সব ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় আইন প্রণয়ন জরুরি’

প্রদীপ কান্তি দে বলেন,

> “দেশজুড়ে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা বেশি দেখা গেলেও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যান্য ধর্ম নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য হচ্ছে। তাই আমরা চাই, সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন হোক এবং আইনের প্রয়োগ যেন সবার জন্য সমান হয়।”

তিনি আরও বলেন,

> “সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আমরা দুই দশক ধরে রাজপথে রয়েছি। কিন্তু কোনো ঘটনারই দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এখন সময় এসেছে ধর্মীয় অবমাননা প্রতিরোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করার।”

‘আইন প্রয়োগে বৈষম্য দূর করতে হবে’

হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি অভিযোগ করেন,

> “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম অবমাননার ঘটনায় যেভাবে তৎপর থাকে, সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে তেমন থাকে না। এমনকি হাতেনাতে ধরা অপরাধীদেরও মানসিক রোগী দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। বাস্তবে এরা সচেতনভাবেই ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এমন কাজ করে।”

তিনি বলেন, প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির বা উপাসনালয়ে হামলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় কটুক্তির মতো ঘটনাগুলোর জন্য ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে (পেনাল কোড) নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান যোগ করা জরুরি।

‘সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের সম্পত্তি ক্রোকের দাবি’

ধর্ম অবমাননার নামে সংগঠিত হামলার বিষয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন,

> “যেসব ঘটনায় ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে নিরীহ হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে, সেই হামলাকারীদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রোক করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে ভবিষ্যতে এমন হামলা কমে আসবে।”

‘সব ধর্মের অবমাননাকারীর সমান শাস্তি হোক’

কুমিল্লার দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,

> “মো. ইকবাল কোরআন রেখে গিয়ে যে সহিংসতা ঘটিয়েছিল, সেটি যেমন অপরাধ ছিল, তেমনি সম্প্রতি অপূর্ব রাদের মতো কোনো ব্যক্তি কোরআন অবমাননা করলে সেও সমান অপরাধী। মন্দিরভাঙা ও ধর্মগ্রন্থ অবমাননা—দু’টিই সমান দোষ।”

তিনি ইসলামিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোর আলেম-ওলামা ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,

> “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা সম্ভব।”

উপস্থিত ছিলেন
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাজেশ নাহা, সাবেক সভাপতি সজীব বৈদ্য, ঢাকা মহানগর হিন্দু যুব মহাজোটের নেতৃবৃন্দসহ যুব ও ছাত্র মহাজোটের অন্যান্য সদস্যরা।

  • শেয়ার করুন