প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫
গাজায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে তুরস্ক আবারও তার দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রমাণ করেছে। ২০২৫ সালের ৮ অক্টোবর সংঘটিত যুদ্ধবিরতির পরও যেখানে জীবন এখনো নাজুক, সেখানে দেশটি ত্রাণ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে। দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (AFAD)-এর সমন্বয়ে প্রস্তুত হওয়া ১৭তম মানবিক জাহাজ ‘গুডনেস শিপ’ মঙ্গলবার তুরস্কের মেরসিন আন্তর্জাতিক বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছে।
৯০০ টন জরুরি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে রওনা
জাহাজটিতে রয়েছে ৯০০ টন মানবিক সহায়তা সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে খাদ্য, ওষুধ, তাবু, শিশু খাদ্য, স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর কষ্ট লাঘবে তুরস্কের এ উদ্যোগ নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে।
শুরুর পর থেকে তুরস্ক এখন পর্যন্ত ১৬টি জাহাজ ও ১৪টি কার্গো বিমানের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে জাহাজটির যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এ সময় বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া। তিনি বলেন, “এটি শুধু সহায়তা নয়, এটি আমাদের মানবিক অঙ্গীকার ও সংহতির প্রতীক।”
মিশরের এল আরিশ বন্দরে পৌঁছাবে ত্রাণ
‘গুডনেস শিপ’ মিশরের এল আরিশ বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে এর পণ্যসম্ভার মিশরীয় রেড ক্রিসেন্টের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এরপর ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কেরেম শালোম সীমান্তপথে গাজায় প্রবেশ করবে, যাতে সহায়তা দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে পৌঁছায়।
তুরস্ক ও মিশরের সমন্বয়ে পরিচালিত এই ত্রাণপথ বর্তমানে গাজায় সহায়তা পাঠানোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রুট হিসেবে বিবেচিত। তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ তুরস্কের মানবিক কূটনীতি ও ধারাবাহিক ত্রাণ অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।
গাজার মানুষের জন্য জীবনরেখা
গাজার হাসপাতালগুলো এখনো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও ওষুধের সংকটে ভুগছে, আর অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তুরস্কের সহায়তা গাজার লাখো মানুষের জন্য এক জীবনরেখা হিসেবে কাজ করছে।
AFAD-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রতিটি ত্রাণ পাঠানোর আগে তা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পাঠানো হয়, যাতে সহায়তা কার্যকরভাবে ও স্বচ্ছভাবে বিতরণ হয়। তিনি বলেন, “প্রতিটি ‘গুডনেস শিপ’ কেবল লজিস্টিক সমন্বয়ের প্রতীক নয়, এটি সহমর্মিতা ও মানবিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।”
রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবিক অঙ্গীকার
তুরস্কের এই কার্যক্রম তাদের ‘মানবিক সংহতি-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির’ অংশ, যা রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সংকটাপন্ন অঞ্চলে সহায়তা প্রদানের ওপর গুরুত্ব দেয়। তুর্কি কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, গাজায় তাদের সহায়তা সম্পূর্ণ মানবিক — মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও আশ্রয় পূরণের উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ।
আরও সহায়তা পথে
১৭তম জাহাজের যাত্রার পর ইতোমধ্যে ১৮তম ‘গুডনেস শিপ’-এর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। তুরস্ক জানায়, যতদিন এই মানবিক সংকট চলবে, ততদিন তারা গাজার পাশে থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া বিদায়ী অনুষ্ঠানে বলেন,
> “আমরা আজ গাজার পাশে আছি, কালও থাকব — যতদিন প্রয়োজন ততদিন।”
তুরস্কের এই ধারাবাহিক মানবিক উদ্যোগ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহানুভূতি, সহযোগিতা ও মানবতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র :paturkey