ইতালি, চীন, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার কিনছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের অভাব বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর সক্ষমতায় সীমা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। ইতালি থেকে ইউরোফাইটার টাইফুন, চীন থেকে জে-১০সি, পাকিস্তান থেকে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান এবং তুরস্ক থেকে টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৭ সালের মধ্যে ইতালি থেকে ১০টি ইউরোফাইটার টাইফুন (৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট) এবং তুরস্ক থেকে ছয়টি টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশের সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করা হবে।

এ লক্ষ্যে বিমান সদর একজন এয়ার ভাইস মার্শালকে সভাপতি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১২ সদস্যের একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে। এতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিমান সদরের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। সংস্থাগুলোকে চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কমিটি ইতালি ও তুরস্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের মধ্যে ক্রয়চুক্তি সম্পন্নের লক্ষ্যে কাজ করবে। তারা খসড়া চুক্তিপত্র পর্যালোচনা, দর-কষাকষি, মূল্য নির্ধারণ, অর্থপরিশোধ পদ্ধতি, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয় চূড়ান্ত করবে। পুরো প্রক্রিয়াটি জিটুজি (সরকার-টু-গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে।

চীনের সঙ্গে আগেই জে-১০সি কেনা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ছিল। পরবর্তীতে ২০টি জে-১০সি ক্রয়ের প্রস্তাবসহ প্রায় ২২০ কোটি ডলারের অফার আসে। অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৬টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাবের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২০ মিলিয়ন ডলার।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পাক-ভারত ও চীন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা, অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুরের পরিস্থিতি, পাশাপাশি মিয়ানমার সংকট বিবেচনায় বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। তারা মনে করেন, সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিই সরকারের অগ্রাধিকার; বিগত কয়েক বছর এ প্রক্রিয়া পিছিয়ে ছিল।

বিমানবাহিনীর সাবেক সহকারী প্রধান এয়ার কমোডর (অব.) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বিমান ও হেলিকপ্টার কেনার এই উদ্যোগ বিমানবাহিনীর আধুনিকতার সূচনা। এর সঙ্গে সার্ভেইল্যান্স, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নও ত্বরান্বিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল—সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট প্রস্তুত।”

তিনি ইউরোফাইটার টাইফুন ও জে-১০সিকে “বিশ্বমানের যুদ্ধবিমান” আখ্যা দিয়ে বলেন, “টাইফুন ডাবল ইঞ্জিনযুক্ত, দীর্ঘ রেঞ্জ ও নৌ-সমর্থন সক্ষম; অন্যদিকে জে-১০সি ৪.৫ প্রজন্মের ব্যয়সাশ্রয়ী যুদ্ধবিমান, যা সীমিত শর্তে পাওয়া যায়।”

সব মিলিয়ে ইউরোফাইটার টাইফুন, জে-১০সি, জেএফ-১৭ ও টি-১২৯ হেলিকপ্টার যুক্ত হলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহর ও অপারেশনাল সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এটি দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হতে পারে।

  • শেয়ার করুন