তারেক রহমানের বৈঠকে ডাক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

খুলনায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নাম দীর্ঘদিন ধরে সমার্থক। দলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যুক্ত থাকা এই রাজনীতিক ৪৬ বছরের পথচলায় মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি পান এবং বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও।

তবুও দমে যাননি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। নগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট কমিটি থেকে তার অনুসারীদের বেছে বেছে বাদ দেওয়া হলেও তিনি নিজস্ব অনুসারীদের নিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করে গেছেন। চার বছর পর সেই অধ্যবসায়ের ফলও পেয়েছেন। কোনো পদে না থেকেও সোমবার (২৭ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ডাক পেয়েছেন তিনি।

এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মঞ্জুর অনুসারীরা একে ‘ত্যাগ ও নিষ্ঠার স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন।

১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনীতিতে পা রাখেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সালে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৯২ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হন তিনি।

তবে দলের ভেতর তার বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ঘনিষ্ঠদের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগও ছিল। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণায় বাদ পড়েন তিনি ও তার অনুসারীরা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করলে তাকে শোকজ করা হয় এবং পরদিনই বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপর শুরু হয় মঞ্জু অনুসারীদের গণপদত্যাগ। কিছুদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোতে নিজস্ব ব্যানারে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে থাকেন তিনি ও তার সমর্থকেরা। জাতীয় দিবসগুলোও তারা পালন করেছেন আলাদাভাবে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন,

> “মানুষ চায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মতো দক্ষ সংগঠক দলকে নেতৃত্ব দিক কিংবা সংসদে খুলনার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করুক।”

নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন,

> “আমি কখনোই দলের বাইরে যাইনি বা বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। খুলনায় বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচি আমার সহযোদ্ধারা পকেটের টাকা খরচ করে বাস্তবায়ন করেছে। কোনো পদ ছাড়াই তারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে।”

তিনি আরও বলেন,

> “ঢাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠকে আমাকে ডাকার কারণে খুলনা বিএনপিতে নতুন উদ্দীপনা এসেছে। মনে হচ্ছে, বিএনপিতে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে। আমি সব সময় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।”

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতন পেরিয়ে আবারও নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্রে ফিরে এসেছেন — এমনটাই বলছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

  • শেয়ার করুন