যে ভারত খুনি পালে সেই ভারত ভেঙ্গে দাও; বাবরের পথ ধরো সেভেন সিস্টার্স স্বাধীন করো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

ঢাকার বুকে আবারও যেন জুলাইয়ের উত্তাল স্লোগান। অগ্নিঝরা হাওয়া রাজধানীর বাতাসে। পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে দাসত্বের প্রতিবাদ। কুটনৈতিক দরবারে কড়া বার্তা। বর্তমান সরকারকে হুঁশিয়ারি। দেশ প্রেমিক ছাত্রজনতা এক কণ্ঠে একসূরে ক্ষোভ প্রতিবাদের স্লোগান। “যে ভারত খুনি পালে সেই ভারত ভেঙ্গে দাও” “যেই ভারত হাসিনা পালে সেই ভারত ভেঙ্গে দাও”। ” বাবরের পথ ধরো সেভেন সিস্টার্স স্বাধীন করো”, ” যেই ভারত জঙ্গি পালে সেই ভারত ভেঙ্গে দাও” , ” যেই ভারত কসাই পালে সেই ভারত ভেঙ্গে দাও”। ” দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”, ” গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী” , আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম। বুধবার ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংগঠনের মোর্চা ‘জুলাই ঐক্য’র’ব্যনারে এই দৃশ্যপট দেখা গেছে ।

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ ভারতে পালিয়ে থাকা সব খুনিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি এবং ভারতীয় প্রক্সি রাজনৈতিক দল, মিডিয়ালীগ ও সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একটি অংশ, ডাকসু, জাকসুর একাধিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। বুধবার বিকেলে কর্মসূচিটি রামপুরা ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে মধ্য বাড্ডা পর্যন্ত অগ্রসর হলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরে কর্মসূচিটি সেখানে থামিয়ে দিলে হাজারও মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ কর্মসূচী সমাবেশে রূপ নেয়। জুলাই ঐক্যের নেতাকর্মীরা তখন মধ্য বাড্ডায় অবস্থান নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন।

জুলাই ঐক্যের সংগঠক ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময় থেকে ভারতের প্রক্সিরা নতুন করে বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। চব্বিশের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে গণ-হত্যা চালানো সব খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে ভারত। সর্বশেষ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা জুলাইয়ের অস্তিত্ব শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার পর আনন্দ-উল্লাস করে ভারতীয়রা। বাংলাদেশ ২.০-এ কোনো আধিপত্যবাদকে আমরা মেনে নেবো না। চব্বিশের খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের আটক করার কোনো উদ্যেগ নেই। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতাঁর উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের কোনো অগ্রগতি নেই। দিনদুপুরে আমার ভাই হাদিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে সেই অপরাধীদের এখনো গ্রেফতাঁর করতে পারে নাই। শুনে রেখো ইন্টোরিম দুই হাজার ছাত্রজনতার রক্তের উপর তোমাদের এজন্যই বসানো হয় নাই। যদি খুনি হাসিনাকে ভারত থেকে বিচার করতে না পারো তাহলে যেই পথে হাসিনা গিয়েছে তোমাদেরও সেই কাঠগড়ায় দাড় করানো হবে। ‘আজকে আমরা তোমাদের প্রতি আমাদের যে ঘৃণা, সেই ঘৃণা প্রদর্শনের জন্য হাইকমিশন পর্যন্ত এসেছি। আজকে এখানে থেমেছি; যদি তোমরা সংশোধন না হও, তাহলে ভেতরেও (হাইকমিশন) ঢুকব।’

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক, ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, আমার ভাই ওসমান হাদীকে হত্যার চেষ্টাকারী কোথায় পাওয়া গিয়েছে ভারতে। এর মানে কী? হাদী ভাইয়ের বুকে এই গুলি কে চালিয়ে? এই গুলি ভারত চালিয়েছে। হাদির গায়ে গুলি কেন? ভারত তুই জবাব দিনি… । তিনি বলেন, হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই বাংলাদেশের জমিনে আর কোনো ভারতের বস্তির টোকাইদের ছাড় দেওয়া হবে না। জুলাইয়ের সেবাদাসী হাসিনাকে যেভাবে উৎখাত করা হয়েছে সেইভাবে ভারতের বস্তির সন্তানদেরও উৎখাত করা হবে। সেভাবে এইবার সেভেন সিস্টার্স খেলে দেওয়া হবে। ভারত যদি খুনিদের ফেরত না দেয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে বাজেট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেওয়া হয়। দুই হাজার ছাত্রজনতার রক্তের উপর দাঁড়ানো সরকারের একমাত্র দায়িত্ব ছিলো হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনা, কিন্তু সেটা তাঁরা করতে পারেনি। বাংলাদেষের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতের সাথে গোপন বৈঠক করে বলেও অভিযো তুলেন মোসাদ্দেক। এটা জুলাইয়ের শহীদদের সাথে গাদ্দারী বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ভারত থেকে খুনি কসাইদের ফেরতের বিষয়ে কী পদক্ষেপ সেটা আমরা জানতে চাই। ভারতের রাজধানী দুইটা, একটা দিল্লিতে আরেকটা কাওরান বাজারে বলেও দাবী তোলা হয়।
হুঁশিয়ারি দিয়ে মোসাদ্দেক আলী বলেন, পরের বার আমরা আসব, সবারে হাতে থাকবে কুন্তা-কুড়াল। একটা ইটও আস্তা রাখা হবে না এখানে। বাংলাদেশ থেকে ভারতের সকল হাইকমিশনার উচ্ছেদ করে দেশ থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সমালোচনা করে মোসাদ্দেক বলেন, আমরা ভেবেছিলাম উনি (তৌহিদ) ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন কিন্তু তার কাজকর্ম আমাদেরকে হতাশ করেছে। এখন পর্যন্ত হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কোনো চোখ রাঙানো প্রতিবাদ আমরা দেখি নাই, সীমান্তে হত্যা হয় তারও কোনো প্রতিবাদ আমরা দেখি নাই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন,যদি এভাবে চালাইতে থাকেন তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে আপনার পদত্যাগ চাইতে বাধ্য হবো।

জুলাই ঐক্যের সংগঠক ইসরাফিল ফরাজি বলেন, ‘আজকের এই কর্মসূচি ছিল একটি সতর্কবার্তা। আমরা জানতে পেরেছি, ভারত লবিস্ট নিয়োগ করেছে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের জন্য, যারা বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের কাছে যাচ্ছে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকেও একইভাবে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’ভারতের সঙ্গে থেকে যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের ‘সাবধান করে দিয়ে’ ইসরাফিল ফরাজি বলেন, ‘আজ আমরা থেমে যাচ্ছি, সামনে আমাদের থামানোর ক্ষমতা প্রশাসন দেখাতে পারবে না। আজ আমরা হাজারে এসেছি, সামনে লাখে আসব। শেখ হাসিনাসহ সকল খুনিদের যদি ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে সামনের দিনগুলো ভারতের জন্য ভালো হবে না।’

  • শেয়ার করুন