প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরো দেশ। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে তাকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ওসমান হাদির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিচে জেলাভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো-
নওগাঁ
নওগাঁয় শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে শহরের নওজোয়ান মাঠে এই জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী।
জানাজায় নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, সদর ইউএনও ইবনুল আবেদীনসহ বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র মিলে হাদিকে হত্যা করেছে। কিন্তু এক হাদিকে শহীদ করে তারা ভুল করেছে, এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে হাদি তৈরি হবে।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, হাদি হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বাত্মক কাজ করছে। নওগাঁর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বগুড়া
বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠে ইনকিলাব মঞ্চ ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আয়োজনে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, জামায়াতের শহর আমির আবিদুর রহমান সোহেল এবং ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি হাবিবুল্লাহ খন্দকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ছিলেন অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক আপসহীন কণ্ঠস্বর। তার এই আত্মত্যাগ আগামীর তরুণ প্রজন্মকে ন্যায়ের পথে চলতে চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে।
মাদারীপুর
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখ শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে বাদ জোহর শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ম্লান করতে আবারও সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নিয়েছে ফ্যাসিবাদী চক্র। হত্যার জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে। তারা শহীদ হাদির আদর্শে একটি বৈষম্যহীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ প্রাঙ্গণে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জজ কোর্টের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক মেজবাউর রহমান পিন্টুসহ জুলাই যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু বলেন, হাদি ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রকৃত সন্তান। অল্প বয়সেই তার দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকেও হার মানিয়েছিল। তার আদর্শ ও জ্ঞান নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
কক্সবাজার
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিকেলে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী সর্বদলীয় ঐক্যমঞ্চ’-এর আয়োজনে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ বিন সাঈদ।
জানাজায় সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমানসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।বক্তারা বলেন, একজন হাদি শহীদ হলেও এখন লাখো হাদি আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এছাড়া উখিয়া ও কোটবাজারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নীলফামারী
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড়ে বিকেলে অনুষ্ঠিত শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজায় মানুষের ঢল নামে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন। জানাজায় ইমামতি করেন কাজী শহীদুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ওসমান হাদি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে অকুতোভয় সাহস দেখিয়ে গেছেন, তা তরুণ প্রজন্মের জন্য আজীবন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্র-জনতা রাজপথে অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে চাকসুর উদ্যোগে এ গায়েবানা জানাজার আয়োজন করা হয়। এতে ইমামতি করেন আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. আবদুল কাদের।
জানাজা-পূর্ব সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোজাম্মেল হক আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ওসমান হাদি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন কীভাবে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়ননীতির ওপর চলতে হয়। আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও আল্লাহ যেন এই অকুতোভয় তরুণদের বাঁচিয়ে রাখেন।চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, মাত্র ৩২ বছর বয়সে হাদি পুরো ভারতীয় আধিপত্যবাদকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। তার দেশপ্রেম ইতিহাসে অম্লান থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান ওসমান হাদি। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে পৌঁছে। শনিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই বীর যোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।