খুলনা সরকারি বিএল কলেজের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে প্রশ্ন দেওয়ায় ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার সমাজবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতিতে তৈরি প্রশ্নপত্রে এ বিষয়টি উঠে আসে। প্রশ্নে ক্রমিক বিভ্রাটসহ একাধিক ভুল থাকায় পরীক্ষা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তখনই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়। এরপর প্রথমে পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং পরে তা বাতিল ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জড়িত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিত্য রঞ্জন সরকারকে শোকজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রধান আবু তালেককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, বুধবার দুপুর ২টায় সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী একাডেমিক ভবন-১–এ শুরু হয়। কিন্তু প্রশ্নপত্রের ক্রমে গড়মিল লক্ষ্য করা যায়—প্রথমেই ৫ নম্বর প্রশ্ন, এরপর ৬, তারপর ১, ২, ৩ ইত্যাদি। প্রশ্নপত্রে ৯ নম্বর প্রশ্নে উল্লেখ ছিল:
“জনাব রিয়াজ তার নাতনিকে নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি পরিদর্শনে যান। সেখানে একজন মহান নেতার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এই ছবিটি আমাদের সেই প্রিয় নেতার, যিনি ১৯৬৬ সালে কিছু দাবি উত্থাপন করেছিলেন। সেগুলো ছিল আমাদের প্রাণের দাবি ও স্বপ্ন পূরণের চাবিকাঠি। এই দাবিগুলো পরবর্তীতে মুক্তিকামী জনতার মধ্যে গভীর উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।’”
এই উদ্দীপককে ঘিরে চারটি প্রশ্ন রাখা হয়।
পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শক, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ জহিরুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে ৩০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। এরপর লিখিত অংশের প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। প্রশ্নের ক্রম এলোমেলো দেখে বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে আসে। পুরো প্রশ্ন পড়ে দেখতে গিয়ে বিতর্কিত অংশটি নজরে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে অধ্যক্ষকে জানালে তিনি প্রশ্নপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে আমি প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে প্রশাসনের কাছে জমা দিই।”
বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ হুমায়ুন কবির বলেন, “৯ নম্বর প্রশ্ন ছাড়াও প্রশ্নপত্রে ৪, ৭, ৯ ও ১১ নম্বর প্রশ্নে গড়মিল ও উদ্দীপকের সঙ্গে প্রশ্নের অমিল ছিল। এসব দেখে শিক্ষার্থীরা হাসাহাসি শুরু করে। তখনই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই এবং পরীক্ষা বাতিল করি।”
তিনি আরও বলেন, “বিএল কলেজের প্রশ্নপত্র অনেক কলেজ অনুসরণ করে, এমনকি টেস্ট পেপারেও ছাপা হয়। এমন গুরুতর ভুল একজন শিক্ষক কীভাবে করলেন তা জানতে তাকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিছু নমুনা প্রশ্ন সংরক্ষণ করা হয়েছে, বাকিগুলো নষ্ট করা হয়েছে।”
প্রশ্নপত্র প্রস্তুতকারী শিক্ষক নিত্য রঞ্জন সরকার কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।