খুলনা: খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামে পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার ১৫ জন অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করেছেন। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে খুলনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মো. নাজমুল আহসান শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জুন দুপুরের দিকে তেরখাদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান নিয়মিত একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্তের অংশ হিসেবে সঙ্গীয় ফোর্সসহ বারাসাত গ্রামে অভিযানে যান। অভিযানে তালিকাভুক্ত এক আসামি মো. পলাশ শেখকে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের পেছন থেকে আটক করার পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পলাশ শেখের চিৎকারে সাড়া দিয়ে আশপাশের এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রায় ৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দ্রুত ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা পলাশ শেখকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সংঘর্ষে এসআই রথীন্দ্রনাথ পোদ্দার, কনস্টেবল সোহেল রানা ও জয়ন্ত রায়সহ একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন।
বিশেষ করে কনস্টেবল সোহেল রানাকে লক্ষ্য করে রামদা দিয়ে মাথায় কোপ মারার চেষ্টা করা হলে সেটি তার ডান বাহুতে লাগে, ফলে তিনি গুরুতর জখম হন এবং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ঘটনার পরদিন এসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে তেরখাদা থানায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
আত্মসমর্পণকারী ১৫ জন আসামিরা হলেন—আকাশ মোল্যা, শিমুল ফকির, সাইদ মোল্যা, জিকু মোল্যা, টুটুল মোল্যা, জুয়েল মোল্যা, ইমরান খলিফা, মুক্তার শেখ, ইব্রাহিম শেখ, রুবেল শেখ, মুরাদ শরীফ, আকাশ মোল্যা (২য়), ওবায়দুল মোল্যা, রহমান শেখ ও তাকিদ মোল্যা। আদালতে হাজির হয়ে তারা জামিন আবেদন করলে আদালত সেটি নামঞ্জুর করেন এবং তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশের ওপর হামলা এবং বাধা প্রদান আইনত মারাত্মক অপরাধ। এটি শুধু পুলিশের জন্য নয়, পুরো সমাজের নিরাপত্তার জন্যই হুমকি। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি এবং পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
এদিকে এমন ঘটনায় বারাসাত ও আশপাশের এলাকায় চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “জনসমক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর এ ধরনের হামলা এক অশনি সংকেত। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।” তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।