নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বয়সকে হার মানিয়ে আবারও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রের বেঞ্চে বসেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য দেলোয়ার হোসেন দুলু। জীবনের ৩৫ বছর আগের ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে নতুন করে গড়ার প্রত্যয়ে হাতে নিয়েছিলেন কলম। তবে এবারের দাখিল পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় পূর্ণ সাফল্য মেলেনি তার। তবুও থেমে নেই দুলু; জানিয়েছেন, আগামীবার আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আবারো পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি।
বর্তমানে তিনি জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। ১৯৮৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তি এবং ১৯৮৮ সালে জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জুনিয়র বৃত্তি অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বাগাতিপাড়া কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পরীক্ষা চলাকালীন তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেনের নির্দেশে তিনি বহিষ্কৃত হন। এ ঘটনাটি তাকে মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে দেয় যে, সেখানেই থেমে যায় তার শিক্ষাজীবন।
তবে ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস। জীবনের অপূর্ণ অধ্যায় শেষ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি ভর্তি হন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ী দারুল খায়ের দ্বিমুখী দাখিল মাদরাসায়। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করে ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন। অন্যান্য বিষয়ে ভালো ফল করলেও ইংরেজিতে সফল হতে পারেননি। তবু দুলুর মনোবল অটুট। তার ভাষায়, “এটাই আমাকে কুরে কুরে খেত। এবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু হলো না। পরেরবার আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ইংরেজিতে পাস করেই ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।”
জামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেন, “এই বয়সে বই-খাতা নিয়ে আবার পড়াশোনায় ফেরা এবং পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সত্যিই দারুণ সাহসিকতার কাজ। দুলু ভাই প্রমাণ করে দিয়েছেন—ইচ্ছাশক্তি থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়।”
দেলোয়ার হোসেন দুলুর এই প্রচেষ্টা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের যেকোনো মুহূর্তে নতুনভাবে শুরু করা সম্ভব, যদি মনের জোর থাকে। ইংরেজিতে অকৃতকার্য হলেও তার অধ্যবসায় শত মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। তার এই সাহসিকতা ও দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়ে সাবেক চেয়ারম্যানসহ অনেকেই দোয়া ও শুভকামনা জানিয়েছেন তার আগামীর পথচলার জন্য।