ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় এক কলেজ শিক্ষকের লাগাতার যৌন হয়রানি ও হুমকির শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক ছাত্রী। নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। এতে তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আরেক সহপাঠীও ৭০ শতাংশ দগ্ধ হন। দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক, বর্তমানে তারা ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শনিবার (১২ জুলাই) ফকির মোহন কলেজে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমন্বিত বিএড প্রোগ্রামের ওই ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তার বিভাগের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার সাহু। ছাত্রীটি অভিযোগ করেন, শিক্ষক তাকে শারীরিক সম্পর্কে না জড়ালে ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন।
গত ১ জুলাই কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলেন ওই ছাত্রী। তবুও সাত দিনের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। শনিবার সকালে সহপাঠীদের নিয়ে কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের কাছাকাছি গিয়ে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শরীরে আগুন নিয়ে ওই ছাত্রী দৌড়ে কলেজ করিডোরের দিকে যান। তখন এক সহপাঠী তাকে বাঁচাতে ছুটে এলে তার কাপড়েও আগুন ধরে যায়। তিনি পেছনে সরে গেলেও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
কলেজ অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ জানান, ছাত্রীটির অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং রিপোর্ট প্রস্তুত হচ্ছিল। ঘটনার দিন সকালেও ছাত্রীটি মানসিক চাপে থাকার কথা বলে সাহুকে ডাকার অনুরোধ করেন। উভয়কে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক সাহু অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ছাত্রী নিজের বক্তব্যে অটল থাকেন।
ওড়িশার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজ জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক সমীর সাহুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কলেজের অধ্যক্ষসহ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এ ঘটনার পর কলেজজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বালাসোর জেলার পুলিশ সুপার রাজ প্রসাদ জানান, তদন্তের জন্য একাধিক দল গঠন করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।