26.7 C
Khulna
Wednesday, July 30, 2025

আল্লাহ আমাকে পরীক্ষায় ফেলতে ছেলে দিয়ে নিয়ে গেছেন: মাহতাবের বাবা

“আল্লাহ যে ফায়সালা দিয়েছেন, সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। আমি এই ফায়সালার ওপর সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। এখন বুঝতে পারছি—আল্লাহ আমাদের পরীক্ষার জন্য একমাত্র ছেলেকে দিয়ে আবার নিয়ে নিয়েছেন।”
এই কথাগুলো বলছিলেন দেবিদ্বারের রাজামেহার ইউনিয়নের উখারী ভূঁইয়া বাড়ির মো. মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া, যিনি হারিয়েছেন তার ১৪ বছরের একমাত্র ছেলে মাহতাব রহমানকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে জানাজা নামাজের আগে উপস্থিত মানুষদের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহতাবের বাবা আরও বলেন, “আমার ছেলে ছিল অসম্ভব ভালো। ১৪ বছরে তাকে কখনো বকা দিতে হয়নি। বাসায় থাকলেও টের পাওয়া যেত না, কারণ সে ছিল শান্ত ও ভদ্র। কখনো কোনো বন্ধুর কাছ থেকে তার নামে কোনো অভিযোগ পাইনি। সব সময় নিচু গলায় কথা বলত, যেন কাউকে কষ্ট না দেয়। মাঝে মাঝে ভাবতাম, এই যুগে এমন সন্তান কীভাবে হয়!”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আমার ছেলেকে চিনেছে, তাকে নিয়ে দোয়া করেছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার একমাত্র সন্তানের জন্য দোয়া করবেন, যেন সে শাহাদাতের মর্যাদা পায়।”

মাহতাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের এলাকার শোকার্ত মানুষ। বিকেলে তার মরদেহ ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে আনা হয়।
রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে চুলাশ উখারী বাজার শাহী ঈদগাঁ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টির মধ্যেও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাজায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান। তিনি বলেন, “মাহতাবের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই আমরা খোঁজ রাখছিলাম। পরে জানতে পারি মাহতাব দেবিদ্বারের সন্তান। ডিসি স্যারের পক্ষ থেকেও খোঁজ রাখা হচ্ছিল। আমরা মাহতাবের পরিবারের পাশে আছি এবং তার স্মৃতি সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নিতে চাইলে উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।”

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহতাব মারা যান। তার শরীরের প্রায় ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তিন দিন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

মাহতাব ঢাকার উত্তরা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার বাবা মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া গ্রেটওয়াল সিরামিকে এজিএম হিসেবে কর্মরত। মাহতাবের দুই বোন রয়েছে—নাবিলা (দশম শ্রেণির ছাত্রী) ও তিন বছর বয়সী নাইসা।

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ