সারাদিন বাজারে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের খলারটেক গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান (৫৫)। কিন্তু জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে তিনি প্রায় অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। কারণ, চলতি মাসে তার বাড়ির বিদ্যুৎ বিল এসেছে প্রায় ১১ লাখ টাকা!
প্রতি মাসে পাঁচ-ছয়শ টাকার বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসা আবদুল মান্নান যখন বিলের কাগজ হাতে পান, তাতে লেখা ছিল ১০ লাক ৯২ হাজার ৮৬৪ টাকা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
আব্দুল মান্নানের স্ত্রী মর্জিনা আক্তারের নামে থাকা আবাসিক মিটারে সাধারণত মাসে ৫০০ টাকার মতো বিল আসে। ঘরে আছে মাত্র তিন-চারটি বাতি, দুটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ। কোনোভাবেই এমন বিপুল পরিমাণ ইউনিট ব্যবহার হওয়া সম্ভব নয়।স্থানীয়রা জানান, দুই দিন আগে (শনিবার) বিদ্যুৎ বিলের কপি বিতরণকারী তার বাড়িতে বিলের কাগজ পৌঁছে দেন। পরে বিল দেখে আবদুল মান্নান প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পাশের কয়েকজনকে দেখানোর পর স্পষ্ট হয়, এই মাসে তার বিদ্যুৎ বিল এসেছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। খবর শুনেই তিনি মূর্ছা যান এবং দীর্ঘ সময় তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেননি। এরপর থেকে তিনি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন চিন্তায়।
এলাকাবাসী জানান, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের এমন ভুল বা হয়রানি নতুন কিছু নয়। প্রায়ই কারো না কারো সঙ্গে এমন অনিয়ম ঘটে। তারা বলেন, এ বিভাগের কর্মীদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন ভুলের কারণে সাধারণ মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।ভুক্তভোগী ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমার স্ত্রী মর্জিনা বেগম তিনি প্রবাসে থাকে। স্ত্রীর নামে পল্লী বিদ্যুতের একটি মিটার রয়েছে। জুলাই মাসে প্রায় ১১ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে আমাদের বাড়িতে। এটা কেমন কথা। আমরা গরীব মানুষ এটা মারাত্মক হয়রানি। এই পরিমাণ বিল শুনার পরপরই মাথাটা ঘুরে গেছে। আমার বাড়িতে সব মিলে তিন চারটা বাত্তি (বাল্ব) জ্বলে আর দুইটা ফ্যান ঘুরে। একটি ছোট ফ্রিজও আছে। কখনোই চার পাঁচশ টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল আসেনি আমাদের বাড়িতে। এবার এ বিল দেখে জ্ঞানহারা হয়ে গিয়েছি।’
তবে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বলছে, ভুলে একটি ডিজিটি (সংখ্যা) বেশি সংযুক্ত করে ফেলায় সওফটয়্যারে অটোমেটিক এ ভুল বিল চলে এসেছে। বিষয়টি নজরে আসলে দ্রুত বিল সংশোধন করে গ্রাহকের কপি তার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ভুলের জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে বিদ্যুৎ অফিস। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (শ্রীপুর জোনাল অফিস) এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আনোয়ারুল আলম বলেন, ‘ডিজিট ভুল যুক্ত হওয়ায় সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বড় অঙ্কের বিল তৈরি হয়েছে। আমাদের নজরে আসার পরপরই প্রকৃত বিল সংশোধন করে নতুন কপি গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যে কর্মকর্তা এ ভুল করেছেন তাকে শোকজ করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের নির্ভুল ও মানসম্মত সেবা দিতে সর্বদা বদ্ধপরিকর