ফরিদপুরে নির্বাচনী বিভাজনবিরোধী বিক্ষোভে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানজট, জরুরি যান ছাড়া সব ধরনের চলাচল বন্ধ
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ফরিদপুর-৪ আসনের আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিক্ষোভে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে দিনব্যাপী চলা মহাসড়ক অবরোধের কারণে অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়।
অবরোধকারীরা ভাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালানো, বাঁশ ও কাঠ ফেলা, ঘুমানোর চৌকি দিয়ে মহাসড়ক বন্ধ রাখা ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেন। এতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরইতলা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার, পুকুরিয়া থেকে তালমা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকার দিকে বগাইল টোলপ্লাজা থেকে এক্সপ্রেসওয়ের পুলিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। একইভাবে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা পৌরসভা থেকে জয়বাংলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন প্রায় বন্ধ রয়েছে। জরুরি যানবাহন ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। আটকে পড়া যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ব্যবসায়ী সেলিম মোল্লা বলেন, “ভোরে রওনা দিয়েছিলাম, এখনো ভাঙ্গা পার হতে পারিনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে আছি, খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেছে।”
গোপালগঞ্জ থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসা লাইলী বেগম বলেন, “সকাল থেকে ভাঙ্গায় আটকে আছি। সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, এখন শুধু বাড়ি রাতের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা সেটাই চিন্তা করছি।”
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা জানান, “অবস্থানকারীরা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, যা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এটি স্থানীয় সমস্যা নয়, জাতীয় সমস্যা। সমাধানও জাতীয় পর্যায়ে খুঁজে বের করতে হবে।”
ভাঙ্গা থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক খোলার চেষ্টা করেছেন, তবে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
এর আগে, ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ৫ সেপ্টেম্বর দুই দফায় মহাসড়কের অন্তত সাতটি পয়েন্টে অবরোধ করা হয়। এরপর তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হলেও অভিযোগের সমাধান না হওয়ায় মঙ্গলবার পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের এই প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালসহ পাঁচ জনের পক্ষ থেকে রিটটি দায়ের করা হয়। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।