হাসিনার ন্যায়বিচার নিয়ে ‘শঙ্কা’, জাতিসংঘে ২ ব্রিটিশ আইনজীবীর ‘জরুরি আবেদন’

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান বিচারে আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের ‘গুরুতর আশঙ্কা’ তুলে ধরে জাতিসংঘে জরুরি আবেদন জানিয়েছেন দুই ব্রিটিশ আইনজীবী।

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি ও তাতিয়ানা ইটওয়েল সম্প্রতি শেখ হাসিনার পক্ষে এই আবেদন জমা দিয়েছেন।

জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ দূতের কাছে এ আবেদন জমা দিয়েছেন তারা।

সোমবার ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই আবেদনে দুই আইনজীবী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় তার ন্যায়বিচারের অধিকার ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ তুলে ধরেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিপীড়ন ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে এ নিয়ে গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক আদালতে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানাল আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গেল মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত–আইসিসিতে একটি মামলার আবেদন হয়।

আবেদনটি করেন ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী কেসি, যিনি এবার আওয়ামী লীগের হয়ে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হলেন।

ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ জানিয়েছেন আওয়ামী আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও, যিনি এক সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) প্রেসিডেন্টকে গত ২৮ অক্টোবর একটি চিঠি পাঠান মোমেন।

চিঠিতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক নিবর্তন, গুম, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অপরাধীদের দায়মুক্তি ও সাংবাদিক নির্যাতনের’ মতো অভিযোগ তুলে ধরেন।

আর সবশেষ পাঠানো ‘জরুরি আবেদনে’ দুই আইনজীবী কেসি ও ইটওয়েল লেখেন, অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগের লোকজনের বিরুদ্ধে যেমন আছে, তেমনি দলটির সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধমূলক নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচার করছে। অন্যদিকে যারা অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল, তারা গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত যেসব অপরাধ করেছে, সেগুলোর বিচার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আবেদনে দুই ব্রিটিশ আইনজীবী বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রাধান্য পাচ্ছে। আর এমন একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে বিচারকাজ চলছে, যাদের জনসাধারণের কোনো ম্যান্ডেট নেই।

এতে শেখ হাসিনার ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে কোন কোন অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তা তুলে ধরেছেন দুই আইনজীবী। এর মধ্যে রয়েছে—

>> ‘ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’ (আইসিসিপিআর) সনদের অনুচ্ছেদ ১৪(১) অনুযায়ী, যে ধরনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার হওয়ার কথা, সেটা হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এছাড়া বিচারকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। আবার মূল আইনজীবীর দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।

>> মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচার চলছে তার অনুপস্থিতিতেই। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে তাকে আনুষ্ঠানিক কোনো নোটিসও দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, যেসব আইনজীবী অতীতে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়েছেন বা দলটির সঙ্গে যুক্ত, তাদের ওপরও হামলা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

>> এ ধরনের বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মতো কোনো সাজা হলে তা হবে আইসিসিপিআরের অনুচ্ছেদ ৬ এর বেঁচে থাকার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

  • শেয়ার করুন