প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ লাভলু মোল্লাহকে (শিশির) সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানোর পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস আগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের মিছিল ঘিরে শাহবাগ থানায় যে মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তাঁর সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফটোকার্ড তৈরি করে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাবির কিছু শিক্ষার্থী লাভলুকে তাঁর বাসা থেকে আটক করে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন।
মঙ্গলবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাসুম মিয়া শুনানি শেষে তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জি এম কাউসার উল ইসলাম জানান, লাভলুকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হলেও আদালতে তোলা হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক, তাঁকে কারাগারে রাখার জন্য আবেদন করেন। প্রতিরক্ষার জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক তা নাকচ করেন।
কাউসার উল ইসলাম আরও বলেন, সোমবার শেখ হাসিনার রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে লাভলু ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর পর রাতেই কিছু শিক্ষার্থী তাঁর বাসার সামনে জড়ো হয়ে তাঁকে আটক করে। আটক হওয়ার আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন—তিনি কোনো অন্যায় করেননি এবং রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণেই তাঁকে টার্গেট করা হচ্ছে। পরে তাঁকে থানায় সোপর্দ করা হলে পুলিশ পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
সাড়ে পাঁচ মাস আগের মামলায় এখন কেন গ্রেপ্তার দেখানো হলো—এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আলামিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলেন।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
জানা যায়, লাভলু তাঁর ফেসবুক আইডিতে শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেছিলেন, যার ওপরে লেখা ছিল— ‘I don’t care’। ক্যাপশনে ছিল— ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।
আটকের আগে পোস্ট করা ভিডিওতে লাভলু বলেন, “আমাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঘণ্টা দুই ধরে কিছু লোক আমার বাসার সামনে মব তৈরি করেছে। পুলিশ এসেছে। আমি কোনো অন্যায় করিনি। শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে।”
কারাগারে পাঠানোর আবেদনে দাবি করা হয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামানের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লাভলু নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের জন্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন—এমন তথ্য–প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলমান থাকায় তাঁকে জেলহাজতে রাখা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, সহযোগীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য রিমান্ড আবেদনের প্রক্রিয়াও চলছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল—৩১ মে সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার কাঁটাবন মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দেন; পুলিশ উপস্থিত হলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরদিন উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিন মিয়া ৯ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৪০–৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন।