ইরান চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনায় আগ্রহী, বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের উদ্যোগ জোরদার
বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করতে চীন থেকে চেংডু জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে ইরান। দেশটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কো টাইমস।
সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইরান প্রভাব বিস্তার করলেও, তাদের বিমান বাহিনীর দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই ঘাটতি কাটাতে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে তেহরান অত্যাধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান শুরুতে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমানের দিকেই ঝুঁকছে দেশটি। কারণ, এই বিমানগুলো রুশ এসইউ-৩৫ এর তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী এবং কার্যকর।
চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান একাধারে আকাশ, স্থল এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্য সক্ষম। ‘চতুর্থ-প্লাস’ প্রজন্মের এই ফাইটার জেটটি নির্মাণ করেছে চেংদু অ্যারোস্পেস করপোরেশন। ‘শক্তিশালী ড্রাগন’ নামে পরিচিত এই বিমানটি মূলত পশ্চিমা এফ-১৬ ও সুইডিশ গ্রিপেন যুদ্ধবিমানের চীনা বিকল্প হিসেবে তৈরি।
ইরান প্রায় দুই দশক ধরেই জে-১০সি সংগ্রহে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। ২০১৫ সালে ১৫০টি বিমান কেনার জন্য চুক্তির প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। তবে বেইজিং বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের ওপর জোর দিলে, মুদ্রাসঙ্কটে থাকা তেহরান তেল ও গ্যাসের বিনিময়ে অর্থপ্রদানের প্রস্তাব দেয়—ফলে আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া, জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
২০২০ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর আলোচনায় নতুন গতি আসে, তবে বিমান সংখ্যা কমিয়ে ৩৬টিতে নামিয়ে আনা হয়। সেবারও অর্থপ্রদানের শর্ত নিয়ে একমত না হওয়ায় চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি।
কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন এনেছে। ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে চীনকে ইরান থেকে তেল কেনার অনুমতি দেয়। একই সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তিও সই হয়, যা জে-১০সি যুদ্ধবিমান চুক্তির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিনই, ইসরাইল-ইরান যুদ্ধবিরতির পরের দিন, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ চীনে সফরে যান। সফরের উদ্দেশ্য ছিল সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেওয়া, তবে এ সময় তিনি চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান পরিদর্শনও করেন। পরিদর্শনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান যদি জে-১০সি সংগ্রহে সক্ষম হয়, তবে তা হবে সময়োপযোগী এবং ইসরাইলের সামরিক প্রাধান্য মোকাবিলায় কার্যকর এক পদক্ষেপ। কারণ, ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত এফ-৩৫, এফ-২২ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে, অথচ ইরানি বিমান বাহিনী তা প্রতিহত করতে পারেনি। যদিও তেহরান দাবি করেছে, তারা বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও কার্যকর প্রতিরোধ গঠনের লক্ষ্যে জে-১০সি সংগ্রহ এখন কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।