25.7 C
Khulna
Monday, July 7, 2025

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি অসুস্থ

চার দশকের বেশি সময় ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছেন। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক যৌথ সামরিক হামলা তাঁকে তাঁর নেতৃত্ব জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে। ৮৬ বছর বয়সী এই নেতা বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তাঁর উত্তরসূরি নিয়ে এখনো কোনও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, এই হামলায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)—যা ইসলামি বিপ্লবের মূল রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। বহু অভিজ্ঞ কমান্ডার নিহত হয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়েছে এবং শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়েছে। মাত্র ১২ দিনের মধ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলারের পরমাণু বিনিয়োগ শেষ হয়ে গেছে। এসব ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন দেশটি ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি ও কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে।

এই হামলার সময় খামেনিকে কোনো জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তাঁর ভাষণও এসেছে একটি অজ্ঞাতনামা স্থান থেকে। যুদ্ধবিরতির কয়েক দিন পর তিনি একটি ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘বিজয়ের’ দাবি করেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বক্তব্যের কড়া জবাবে বলেন, “আপনি ভয়াবহভাবে মার খেয়েছেন।”

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও অর্থনীতির মাঝে ভারসাম্য রেখে দেশ পরিচালনা করলেও এখন খামেনি একটি দুর্বল রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পারমাণবিক কর্মসূচি স্থবির, আঞ্চলিক মিত্রগোষ্ঠী দুর্বল, আর উত্তরাধিকার নির্ধারণে রয়েছে জটিলতা। ১৯৮৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নারীর অধিকার আন্দোলন, ২০০৯ সালের গণবিক্ষোভ, অর্থনৈতিক সংকট ও গুপ্তচরবৃত্তির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। তবে এবারই প্রথম ইরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আক্রমণের শিকার হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর সম্ভাব্য হত্যার কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের আগের রণনীতি—আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শন ও শত্রুকে ভয় দেখানো—এখন আর কার্যকর নয়। যদিও খামেনির শাসন এখনো টিকে আছে, তবু সেটা আগের মতো শক্তিশালী নয়। তিনি চাইলে এ সংকটকে কাজে লাগিয়ে আবারও পারমাণবিক উন্নয়নের পথে ফিরতে পারেন, কিংবা জাতীয় ঐক্যের মুহূর্তে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাই এসব সম্ভাবনাকে রুদ্ধ করে রেখেছে।

সর্বশেষ ভাষণে খামেনি বলেছেন, “প্রায় ৯ কোটির দেশ এক কণ্ঠে, এক উদ্দেশ্যে একত্র হয়েছিল।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, শীর্ষ পর্যায়ের গোয়েন্দা ব্যর্থতা, সামরিক বিপর্যয় ও কোণঠাসা অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য এখন তাঁকেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ইরান কি আগের নীতিতে চলবে, নাকি নতুন পথ খুঁজবে?

এই সংকটপূর্ণ সময়ে ইরানের ভবিষ্যৎ এখন খামেনির কাঁধে। তবে প্রশ্ন হলো—তাঁর সেই কাঁধ কি আগের মতো যথেষ্ট শক্তিশালী রয়েছে?

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ