প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট, ইভিএম বাতিলের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ লক্ষ্যে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পোস্টাল ব্যালট প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে ভবিষ্যতের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আর ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত অষ্টম কমিশন সভায় এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, প্রবাসী ভোটারদের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ভোটাররা অনলাইনে নিবন্ধন করে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, আগে শুধুমাত্র কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ছিল কমিশনের। তবে এখন পুরো আসনের ভোটগ্রহণ বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। আশা করা হচ্ছে, সরকার সেই ক্ষমতা পুনরায় কমিশনকে প্রদান করবে।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন থেকে জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার—কোনো নির্বাচনেই আর ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। তবে ইতিমধ্যে সংগৃহীত ইভিএমগুলোর ভবিষ্যৎ ব্যবহার নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
নতুন আইন ও হলফনামার পরিবর্তন
প্রার্থীদের হলফনামায় নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যেমন—দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে তার সনদসহ ঘোষণা দিতে হবে এবং সারাজীবনের ফৌজদারি মামলার তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস আইন’ প্রণয়ন করা হবে বলে জানান সানাউল্লাহ। দল নিবন্ধন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পেরেছে তাদের খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যারা পারেনি, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পাঁচটি বিশেষ কমিটি
আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন পাঁচটি বিশেষ সমন্বয় ও তদারকি কমিটি গঠন করেছে। ইসির উপসচিব শাহ আলম স্বাক্ষরিত একাধিক অফিস আদেশে এসব কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়।
কমিটিগুলোর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও প্রবাসী ভোট সংক্রান্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা বিষয়ক কমিটির নেতৃত্বে আছেন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। মাঠ প্রশাসন সমন্বয় কমিটির প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। আর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্যানেল প্রস্তুতি তদারকি করবেন নির্বাচন কমিশনার তহমিদা আহমদ।
সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও প্রযুক্তি-বান্ধব করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।।