ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার নৃশংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই মর্মাহত হয়ে দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছেন ড. ফয়জুল হক, যিনি বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) মালয়েশিয়া বিএনপির সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তার এই ঘোষণায় ঝালকাঠি জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কারণ, স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী জানান—তারা জানতেনই না যে ফয়জুল হক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বরং, অনেকের দাবি, জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যার প্রমাণস্বরূপ বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার একান্ত ছবি ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি ৩০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ফয়জুল হক যে বিএনপির কেউ ছিলেন, তা জানতাম না। তাকে সবাই ‘কায়েদ সাহেব হুজুরের নাতি’ হিসেবে চিনে। তার পদত্যাগের খবরে আমরা বিস্মিত।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেনও বলেন, “তিনি যদি দলের কেউ হতেন, তাহলে চেনার কথা। তার কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা এখানে আমরা দেখিনি। বরং, জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য জেলা জামায়াতের শীর্ষ একজন নেতার সঙ্গে কথা বলবো।”
ফয়জুল হকের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি ঝালকাঠি-১ আসনের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। তবে এসব পোস্টারে কোনো রাজনৈতিক দলের নাম, প্রতীক বা শীর্ষ নেতাদের ছবি দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ভাষ্যমতে, তিনি জামায়াতের টিকিটে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং জামায়াতের সাম্প্রতিক একটি সমাবেশেও অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে তাকে দেখা গেছে এমন তথ্য মেলেনি।
রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তির বিষয়ে ড. ফয়জুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজ পাঠান, যাতে মালয়েশিয়া বিএনপির কমিটির তালিকার ৪০ নম্বরে সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে তার নাম রয়েছে। এছাড়া, ২০২১ সালে করোনাকালে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এলাকায় সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের সময় তোলা একাধিক ছবিও তিনি সরবরাহ করেন।