চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ইমতিয়াজ আহমেদ ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মামুনের থাকার কথা ছিল ক্যাম্পাসে। এখন তারা নগরের পার্কভিউ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। পাশাপাশি দুই শয্যায় লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তারা। অস্ত্রোপচারের পর মামুনের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চোখ খুলেছে, তবে কথা বলতে পারছেন না। ইমতিয়াজের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁর জ্ঞান এখনও ফেরেনি। দুজনের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে গুরুতর আহত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র নাইমুল ইসলামকে ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ডান হাতের রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাঁকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এনে গতকাল সকালে অস্ত্রোপচার করা হয়। শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আইসিইউতে দুজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল সোমবার চিকিৎসাধীন ছিলেন ১১ শিক্ষার্থী। আইসিইউ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা ছাত্রদের কারও মাথায় কোপ ও ইটের ক্ষত, হাত-পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নগরের পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউর কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ আমীন বলেন, আইসিইউতে থাকা দুই শিক্ষার্থীর মাথার খুলি ও মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতের কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। মস্তিষ্কে আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের সেরে উঠতে সময় লাগবে। তবে মামুনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ইমতিয়াজের অবস্থা এখনও ক্রিটিক্যাল। আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ছয় শিক্ষার্থীর অবস্থা স্বাভাবিক। পার্কভিউ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ছয় শিক্ষার্থী হলেন– সাদিদ মাহবুব, মিজানুর রহমান, মো. সাইফুল, রোহান, বাহারুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ছাত্র মো. ইসমাইল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়েছে শুনে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। গ্রাম থেকে বড় বড় ইটের টুকরো উড়ে এসে বাঁ পায়ের পাতায় পড়ে। এতে পা থেঁতলে যায়। উপর্যুপরি ইটের আঘাতে দৌড়াতে না পেরে মাটিতে পড়ে যাই। তখন আমাকে লাঠি দিয়ে যে যেভাবে পেরেছে মেরেছে। আমি মাথা, পা, ঘাড়ে একাধিক আঘাত পেয়েছি।
আরেক শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হলে থাকি। ইটের আঘাতে আমার মাথার পেছনের অংশ ফেটে যায়। এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছি। দু’দিকের ইটপাটকেলের মধ্যে পড়ে হঠাৎ দেখি, আমার মাথা দিয়ে পানির মতো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যেই অনেকে এসে গাছের গুঁড়ি, লাঠি, রড, নারকেল গাছের ডাল দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমি হাত, পা আর মাথায় আঘাত পেয়েছি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার বুশরা সিকদার বলেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের হাড় ভেঙেছে, কারোর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। কারও হাত-পা ভেঙেছে। তবে সবাই শঙ্কামুক্ত।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোবরা গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করছি। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুজন লাইফ সাপোর্টে আছেন। একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঢাকায় নাইমুলের অস্ত্রোপচার
সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামের ডান হাতের রক্তনালি ছিঁড়ে যায়। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাঁকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরীর অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে। সেখানকার এক চিকিৎসক জানান, সকালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি বিভাগের ১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। দু’দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হবে। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
নাইমুল ইসলামের বন্ধু আসিফ শরীফ জানান, তাঁর ডান হাতের কনুইয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়, ফলে হাতের রগ কেটে যায়। এ ছাড়া মাথা, পিঠ এবং ডান পায়ে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাতটি বাঁচানো সম্ভব হলেও তিনি ভবিষ্যতে শক্ত বা ভারী কাজ করতে পারবেন না। সূত্র সমকাল