ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাবেক প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল মহসেন রেজায়ি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিয়ে ইরান প্রমাণ করেছে, তারা একসাথে ওয়াশিংটন ও তেলআবিবকে মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে।
বুধবার (৯ জুলাই) মেহর নিউজকে দেওয়া এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রেজায়ি বলেন, “এই প্রতিরোধ আমাদের শহিদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সেই সাহসী কথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়—যিনি বলেছিলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের চ্যালেঞ্জ করতে পারি।’ আজ তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।”
গত ১৩ জুন ইসরাইলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি গোয়েন্দা ও সামরিক সহায়তায় ইরানের উপর একাধিক বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’ নামে বড় পরিসরে আক্রমণ শুরু করে। এই অভিযানে ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইলের পারমাণবিক, সামরিক ও শিল্প অবকাঠামোয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায়। তেলআবিব, হাইফা এবং বেইর শেভার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল।
রেজায়ি জানান, ইরানের ধারাবাহিক পাল্টা হামলার মুখে মাত্র বারো দিনের মধ্যে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেয়, যদিও তারা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের তথ্যে বলা হয়, বাট ইয়াম শহর প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, যার দৃশ্য গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মতো মনে হয়েছে।
এই প্রতিশোধমূলক আক্রমণের অংশ হিসেবে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি আল-উদেইদেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। রেজায়ি বলেন, কাতারি সূত্র অনুযায়ী সেখানে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যদিও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
তিনি বলেন, “বিশ্বে কোনো দেশ এতটা সাহস দেখাতে পারেনি—চীন পর্যন্ত নয়। আমাদের এই প্রতিরোধ স্পষ্ট করেছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র একটি আস্থা ও শক্তির প্রতীক, যা অনেক আঞ্চলিক দেশ উপলব্ধি করেছে।”
রেজায়ি দাবি করেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ এক বছর ধরে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করেছিল, এমনকি গ্রিস ও ভূমধ্যসাগরে সামরিক মহড়াও চালিয়েছিল। তবু তারা ইরানের শীর্ষ নেতাদের কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টি, তেহরানে বিরোধী গোষ্ঠী ঢোকানো এবং দেশটিকে ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করলেও সবকিছুতেই ব্যর্থ হয়েছে। তারা সিরিয়ার মতো ইরানের সামরিক অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক হামলা চালানোর ছক কষেছিল এবং আকাশসীমা দখলের চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু ইরানের প্রতিরক্ষা তাদের থামিয়ে দেয়।
রেজায়ি আরও বলেন, এই যুদ্ধে ইসরাইল প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যা নির্মাণে দুই বছর সময় লেগেছিল।
“ইসরাইলের প্রতিটি পরাজয় আমাদের প্রতিটি বিজয়ের সমান,” বলেন রেজায়ি। “তাদের বিপুল ব্যয়, নিরাপত্তার দুর্বলতা এবং লক্ষ্যে ব্যর্থতা আমাদের শক্তি ও অবস্থানকেই দৃঢ় করেছে।”