ভারতের ইন্দোর শহরের রাস্তায় হেলমেট পরে তাতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে হাঁটছেন এক যুবক। এই ব্যতিক্রমী দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল, যেখানে তাকে ডাকা হচ্ছে ‘হেলমেট ম্যান’ নামে। যদিও বিষয়টি প্রথমে মজার মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভয়াবহ। ওই যুবক সতীশ চৌহান জানিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং নিজের ওপর সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
নিউজ১৮-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, সতীশের প্রতিবেশী বলিরাম চৌহান ও মুন্না চৌহানের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। প্রায় প্রতিদিনই বাকবিতণ্ডা হচ্ছে, এমনকি পরিস্থিতি শারীরিক সংঘর্ষেও পৌঁছেছে। সতীশের আশঙ্কা, যেকোনো সময় তার ওপর হামলা হতে পারে। সেই কারণেই হেলমেটে ছোট একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করছেন তিনি, যাতে হামলার ঘটনা ঘটলে প্রমাণসহ অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়।
সতীশ অভিযোগ করেন, তিনি একাধিকবার হিরানগর থানায় গিয়েও পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। পুলিশ অভিযোগ নেয়নি, এমনকি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করেনি। তিনি বলেন, “আমি বহুবার প্রশাসনের কাছে গেছি, কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। অবশেষে নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হচ্ছে।”
তার এই উদ্যোগ কেউ কেউ হাস্যকর মনে করলেও, অনেকেই এটিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি দুঃখজনক প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ অনুরাগ দ্বারী নামে একজন লিখেছেন, “দেখতে যেমন অদ্ভুত লাগছে, বিষয়টি ততটাই গুরুতর। প্রশাসনের নিরাপত্তা না পেয়ে মানুষ নিজেই এখন প্রহরী হয়ে উঠছে।”
ইন্দোর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতীশের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ বহুদিনের এবং তা শারীরিক সহিংসতায়ও রূপ নিয়েছে। উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন।
এই ঘটনাটি সমাজে ক্রমবর্ধমান অনাস্থা এবং নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। যেখানে একজন নাগরিক তার মৌলিক নিরাপত্তার জন্যও নিজের কাঁধেই দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন—সেটি নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার একটি করুণ চিত্র।