26.1 C
Khulna
Monday, July 14, 2025

অপরাধের শীর্ষ শহরের তালিকায় খুলনা

খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম: অপরাধে দেশের তিন শীর্ষ নগরী

দেশের তিন প্রধান শহর—খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম—এখন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে। একসময় নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অপরাধ সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন পুরো শহরজুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে। মাদক, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং ও খুনাখুনিতে জনজীবন আতঙ্কিত।

খুলনা: চরমপন্থা থেকে সন্ত্রাসে

একসময় চরমপন্থিদের ঘাঁটি ছিল খুলনা। এখন শহরের অলিগলিতে খুনের ঘটনা ঘটছে প্রকাশ্য দিবালোকে। গত ১০ মাসে খুলনায় ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে ৮টি ঘটেছে আধিপত্য বা মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বে।

২৭ জুন, রূপসার রাজাপুরে মাদক নিয়ে বিরোধে গুলি হয় তিনজনকে, নিহত হন সাব্বির।

১১ জুলাই, যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি ও রগ কেটে হত্যা করা হয়। বিএনপি একে রাজনৈতিক হত্যা দাবি করেছে।

২৩ জানুয়ারি, ময়লাপোতায় খুন হন যুবক সাদিকুর।

১৬ মার্চ, গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শাহীনুল হক শাহীনকে।

৯ জানুয়ারি, কক্সবাজারে খুন হন সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু, যিনি চরমপন্থি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ জানান, মনোবল হারানো পুলিশ সদস্যদের পুনরায় সক্রিয় করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তারা এখন আগের চেয়ে বেশি সক্রিয়।

ঢাকা: অপরাধের হটস্পট ছড়িয়ে পড়ছে

ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে রাজধানীতে ৭,৮২৭টি মামলা হয়েছে—যা গত বছরের তুলনায় ১৮% বেশি। সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ একাধিক এলাকা এখন অপরাধের হটস্পট।

মোহাম্মদপুরে কিলার বাদল ও কিলার লাল লাল্লুর নেতৃত্বে চলছে কিশোর গ্যাং।

১৮ মে, জাপান গার্ডেন সিটির কাছে ব্যবসায়ী আবু আলেমকে কুপিয়ে আহত করে চাপাতি কাইয়ুম।

২৭ মে, একই এলাকায় আহত হন ব্যবসায়ী সাব্বির আহমেদ।

মিরপুর, কাফরুল, ভাসানটেকে ইব্রাহিম, শাহাদত, মুক্তারদের দখলে চলছে মাদক ও চাঁদাবাজি।

অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল ইসলাম মনে করেন, কেবল পুলিশি তৎপরতায় অপরাধ কমবে না। দরকার কমিউনিটি পুলিশিং, ন্যায়বিচার, খেলাধুলা ও তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণ।

চট্টগ্রাম: গ্যাং-নিয়ন্ত্রিত নগরী

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ২০২৫ সালেই ঘটেছে অন্তত ১২০টি হত্যাকাণ্ড। ইয়াবা ও আইসের মতো ভয়াবহ মাদক ছড়িয়ে পড়েছে অলিতে-গলিতে। কিশোর গ্যাং ও ফুটপাত দখলকে ঘিরে বাড়ছে সহিংসতা।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংগুলো জড়িত ছিনতাই, মারামারি ও হত্যাকাণ্ডে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা, বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক প্রভাবকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মৌমিতা পাল বলেন, অপরাধ দমনে শুধু অভিযান নয়—প্রয়োজন কাজের সুযোগ, সুস্থ বিনোদন এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধ করা।

সারসংক্ষেপে, দেশের শীর্ষ তিন শহরে অপরাধ বেড়ে চলেছে উদ্বেগজনক হারে। খুন, মাদক, গ্যাং, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাব—সব মিলিয়ে নাগরিক নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্নের মুখে।

তথ্যসূত্র- দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ