ঢাকার ভাটারা থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মারা গেছেন ফিরোজা আশরাভী (২৭) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা। তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ফিরোজা আশরাভী ছিলেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের লেকচারার। আহত ব্যক্তি ইসমাঈল সুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের লেকচারার এবং ফিরোজার স্বামী বলে তিনি নিজেই দাবি করেছিলেন। তবে সুজনের পরিবার এ সম্পর্ক অস্বীকার করে।
ঘটনার পটভূমি:
পুলিশ জানায়, বুধবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ৩টার দিকে পল্লবীর বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দেন ফিরোজা। এরপর আহত সুজনকে নিজেই বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। পরে সুজনের পরিবারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হলে, ফিরোজা বৃহস্পতিবার বিকেলে ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, তাকে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে।
সেই কলের ভিত্তিতে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। পরে জানা যায়, পল্লবী থানায় স্বামীর উপর হামলার ঘটনায় ফিরোজার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। থানা পরিবর্তন করে তাকে পল্লবীর দায়ে আপাতত ভাটারা থানায় রাখা হয়।
থানায় বিষপান ও মৃত্যুর ঘটনা:
ভাটারা থানায় নারী পুলিশের পাহারায় থাকাকালে ফিরোজা আইনি সহায়তার জন্য একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ‘লিগ্যাল এইড কর্মী’ পরিচয় দিয়ে দুজন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি থানায় এসে তার বাসা থেকে মোবাইল চার্জার, ইনহেলারসহ একটি প্যাকেট নিয়ে আসেন। ওই প্যাকেটেই ছিল বিষের বোতল।
সেই বোতল হাতে পেয়েই ফিরোজা মুখে ঢেলে পান করতে শুরু করলে পাশে থাকা নারী কনস্টেবল বাধা দেন। ধস্তাধস্তির মধ্যেই বিষ পান করেন ফিরোজা। পরে বোতলের গায়ে ‘কীটনাশক’ লেখা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, এরপর ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হলে সেখানেই মারা যান তিনি।
দায়িত্বে অবহেলায় বরখাস্ত ও মামলা:
ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এসআই জামাল হোসেন, কনস্টেবল শারমিন ও নাছিমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে বিষপান ও আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় ভাটারা থানায় পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ট্রান্সজেন্ডার শোভা ও কণাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিষটি ফিরোজা অনলাইনের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কিনেছিলেন এবং সেই কুরিয়ারের তথ্য ও কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আহত ইসমাঈল সুজন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার পুরুষাঙ্গের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্তন করা হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র আলোড়ন ও বিতর্ক। নারী নির্যাতন, পারিবারিক সম্পর্ক, পুলিশি দায়িত্বে গাফিলতি এবং বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।